সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে আওয়ামী লীগ নেতাসহ চার বখাটেকে ছাড়াতে থানার সামনের বিক্ষোভ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।
এদিকে বখাটেদের থানা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মেয়েটির বাবা-চাচাসহ পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী মেয়ের চাচা সাংবাদিক স্বপন মির্জা জানান, ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর বখাটেদের পক্ষ নিয়ে থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ ও যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল বাবু থানায় তদবির শুরু করে। থানা থেকে ছাড়াতে না পেরে মীমাংসার জন্য চাপ দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় আমাদের পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করছে। এমনকি আসামিদের ছাড়ানোর জন্য থানার গেট ঘেরাওসহ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধও করেছে। এ অবস্থায় আমাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, বাবু মির্জার মেয়েকে হৃদয় ডেকে নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এ নিয়ে সংবাদ পেয়ে বাবু মির্জা ঘটনাস্থলে এসে হৃদয়কে চড়-থাপ্পড় মারে। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে প্রভাষক রাশেদুলসহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিষয়টি রাতে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তা হয়নি। সকালে রাশেদুল ইসলামের কলেজের শিক্ষার্থীরা থানার সামনে বিক্ষোভ করে। সংবাদ পেয়ে আমিও ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।
এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, উত্ত্যক্তের ঘটনায় মেয়ের বাবা ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি দিয়ে মামলা করেছে। এর মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। আর আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি রাশেদুল ইসলামসহ বখাটেদের ছাড়ানোর জন্য রাস্তা অবরোধসহ থানা গেটে কিছু লোকজন জড়ো হয়েছিল। পরে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেয়ে বাবলী খাতুনকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গেলে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার চৌহালী প্রতিনিধি খোরশেদ আলম বাবু মির্জাকে মারধর করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রাশেদুল হাসান রাশেদসহ (৪২) চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার অন্যান্যরা হলেন- এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকার মো. আজিজুল হক হৃদয় (২০), গোপীনাথপুর গ্রামের নাজমুল হোসেন রোকন ভূঁইয়া (২৫), খোকশাবাড়ি গ্রামের আশরাফুল ইসলাম (২৭)।
নির্যাতিত মেয়ের বাবা জানান, তার মেয়ে বাবলী খাতুন কেজির মোড়ে আইসিএল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়ার পথে আজিজুল হক হৃদয় তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি সে পরিবারকে জানায়। পরে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে বখাটেদের নিষেধ করি। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয় আজিজুল। এ অবস্থায় গতকাল বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল বাবলী। পথিমধ্যে কেজির মোড় এলাকায় পৌঁছলে রাস্তার পাশে ওঁৎ পেতে থাকা আজিজুল হক হৃদয় তাকে হেনস্তা করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই এবং শ্লীলতাহানির ব্যাপারে প্রতিবাদ করি। এ সময় এজাহারনামীয় সাত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
মন্তব্য করুন