দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও পৌরসভায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্পের অধীনে ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় অর্ধেক মসজিদের। কিন্তু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় ভূমি মালিকের সাথে কথা না বলেই কাজ শুরু করায় থমকে গিয়েছে নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় মরিচা ধরছে পড়ে থাকা লোহায়।
জানা যায়, পৌরসভার পূর্ব বাইপাস সড়কের উত্তর পাশে পুরনো মসজিদে দানকৃত সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমির সাথে আরও ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ১১ জুন যথারীতি টেন্ডারও আহ্বান করে গাইবান্ধা গণপূর্ত অধিদপ্তর। জমি অধিগ্রহণসহ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯০ টাকা।
কাজের দায়িত্ব পান ঢাকার মুক্তা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড অ্যান্ড কনভয় সার্ভিস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে কাজও শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। খোড়াখুড়ির পর কয়েকটি পিলারের ছকও দেয় তারা। কিন্তু মূল রাস্তার সাথে বাড়ি ও দোকান থাকা ২৩ শতাংশ জমির মালিক খোকন ও তার ভাই এবং পশ্চিমে চা দোকানি লাল মিয়া ও ভাইয়ের বাড়ির সাড়ে ৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বাধে বিপত্তি। বাজার দর ও অধিগ্রহণ দরের মধ্যে পার্থক্য থাকায় বেঁকে বসেন তারা। বন্ধ হয়ে যায় কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার ধারে টাঙানো সাইনবোর্ডটি থেকে খসে পড়েছে মসজিদ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাদি। টিন দিয়ে ঘেরা বাউন্ডারির ভিতরে পড়ে রয়েছে মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার হবে এমন বেশ কয়েকটন লোহা। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় মরিচা ধরেছে তাতে। মসজিদের পিলার তৈরিতে খনন করা হয়েছে দক্ষিণ দিকে। তাতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি পিলার তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই স্থগিত হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জায়গার পশ্চিম পাশে এখনও রয়েছে লাল মিয়ার বাড়ি এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া খোকন ও তার ভাইদের জমি।
জমির মালিক খোকন বলেন, আমরা মালিক হওয়ার পরেও না জানিয়ে খনন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, আমাদের জমিতে দোকান ও বাড়ি রয়েছে। যেখানে প্রতি শতক জমির বাজার দাম কয়েক লাখ টাকা, সেখানে দাম ধরা হয়েছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। মসজিদ হোক সেটা আমরাও চাই। কিন্তু ক্ষতি করে নয়।
সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী ও পুরনো মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন আসর উদ্দিন মুন্সী। তারা বলেন, তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে জমির টাকা না দিয়েই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদার। অনেকের টাকাই পরিশোধ হয়েছে। তবে এখনও দুই-তিনজনের টাকা বাকি আছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগাযোগ করতে দায়িত্বে থাকা গার্ড ও গণপূর্ত অধিদপ্তর, গাইবান্ধায় বিভিন্নভাবে ফোন নাম্বার সংগ্রহের চেষ্টা করেও তা পাওয়া যায়নি।
মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নির্মাণের তথ্য জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তর, গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রফিকুল হাসানের কাছে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলেও সাক্ষাতকার দিতে বাধ্য নন বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে বলেন, আবার টেন্ডার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলও শাখা থেকে প্রদান করা হয়। যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে বিধি অনুযায়ী তারা টাকা পাবেন।
জাতীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ নিগার জানান, আমিও সরেজমিনে গিয়েছি। দেখেছি মডেল মসজিদের কাজ আসলেই আটকে রয়েছে। আমি আবার ঢাকা গিয়ে মন্ত্রীর কাছে কাজ আটকে থাকার বিষয়টি খোলাসা করবো। আশা করছি খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কাটিয়ে দেশের অন্যান্য মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মতো এলাকার মানুষ যাতে নামাজের পাশাপাশি ইসলামি জ্ঞানের চর্চা করতে পারেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
মন্তব্য করুন