মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের ভূকশিমইল গ্রামে দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত একটি রাস্তাটি কেটে ফেলায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসায় যেতে বিপাকে পড়ছেন। এ ছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক তাদের ফসলি জমিতে আবাদ করতে যেতেও বেশ অসুবিধায় পড়ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে, চলাচলের রাস্তা কাটার প্রতিকার চেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত আবেদন করেছেন সাইস্তা মিয়া নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, একই বাড়ির প্রতিবেশী আলাউদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল হান্নান, চিনু মিয়া, বদর মিয়া, আব্দুর রউফ, আব্দুল আজিজ, বাবলু মিয়া, হাসান মিয়া ও জুবেল মিয়া রাতের আধারে রাস্তা কেটে পুকুর তৈরি করেছেন।
এদিকে স্থানীয় এলাকার শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা ব্যবহার করে কম সময়ে ভূকশিমইল চক জামে মসজিদ, কিন্ডারগার্টেন, ভূকশিমইল কওমী ও আলিম মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতো। কিন্তু রাস্তাটি কাটায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। এ ছাড়া স্থানীয় এলাকার মুসল্লীরাও পড়েছেন বিপাকে।
সাইস্তা মিয়ার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার নবাবগঞ্জ মৌজার রাস্তায় ইউনিয়নের ভূকশিমইল গ্রামের সাইস্তা মিয়ার বাড়ির পূর্ব পাশের উত্তর-দক্ষিণমুখী একটি রাস্তা ছিল। ওই রাস্তা দিয়ে সাইস্তা মিয়ার বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাস্তার উত্তরাংশ ইটসলিং করা হয়। বাকি অংশটুকু এখনো কাঁচা সড়ক রয়েছে। ৬ ফুট প্রস্থের এই রাস্তায় বাড়ির উঠোন হতে বের হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ উভয়দিকে গ্রামের প্রধান সড়কে গিয়ে উঠা যায়। অভিযুক্ত আলাউদ্দিন গং তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাইস্তা মিয়াসহ আশপাশের লোকজনকে রাস্তা দিয়ে চলাচল না করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আধারে গত এক সপ্তাহ আগে রাস্তাটি কেটে মাটি সরিয়ে দেন এবং অন্যপুকুর থেকে পানি এনে নতুন একটি পুকুর তৈরি করেন। এতে সাইস্তা মিয়ার বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের অর্ধ শতাধিক পরিবারের শিশু শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তা কেটে পুকুর তৈরি করা হয়েছে এবং পুকুরের চারিপাশে বেঁড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। চতুরতার আশ্রয় নিয়ে পাশের একটি পুকুর থেকে পানি এনে ভরা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান, আব্দুল্লাহ আল সৌরভ ও তাসফিয়া তাবাসসুম অভিযোগ করে বলেন, এই রাস্তা ব্যবহার করে আমরা খুব সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাস্তাটি কেটে পুকুর করায় আমরা বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে বাড়তি সময় ব্যয় করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করি। আমরা এই রাস্তাটি পুণরুদ্ধার হওয়া চাই।
এসএসসি পরীক্ষার্থী সালমা বেগম ও রাদিয়া বলেন, আমরা এই সড়ক ব্যবহার আগে আমরা ১০ মিনিট আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতাম। কিন্তু এখন পরীক্ষার সময় প্রায় ৩০ মিনিট আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। এতে আমাদের খুব কষ্ট করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অচিরেই যেন রাস্তাটি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী আখলিছ মিয়া বলেন, স্থানীয় চক মসজিদের পঞ্চায়েতের সাথে প্রতিপক্ষের বিরোধ রয়েছে। মসজিদের উত্তরপাশের তারা জায়গা ক্রয় করেছে। মসজিদের সামনে দিয়ে তারা রাস্তা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতের লোকজন তাদের রাস্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেই প্রতিহিংসায় আমাদের ১৫০-২০০ বছরের ব্যবহৃত রাস্তাটি তারা রাতের আধাঁরে কেটে ফেলেছে।
অভিযোগকারী সাইস্তা মিয়া বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষদের সময়কাল থেকে এই রাস্তা আমরা ও প্রতিপক্ষরা ব্যবহার করে আসছি। রাতের আধারে বিবাদীরা আমাদের ব্যবহৃত রাস্তাটি কেটে ফেলায় ভোগান্তিতে পড়েছি। বিষয়টি আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ গণমান্য ব্যক্তিদের অবগত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত আলাউদ্দিন ও তার ভাই আমির উদ্দিন বলেন, রাস্তাটি আমাদের পারিবারিক। দীর্ঘদিন থেকে বাপ-দাদার সময় থেকে ব্যবহার করে আসছি। প্রতিপক্ষরা তাদের বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে রাস্তা ব্যবহার করছে। রাস্তাটি নিয়ে ৭ বছর আগে স্থানীয়ভাবে সালিশ হয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতিপক্ষরা এই রাস্তাটি পান না। তাই আমাদের জায়গায় আমরা পুকুর করেছি। তা ছাড়া জায়গা জমির মালিকানা হওয়া যায় কাগজের ভিত্তিতে তাদের কোনো কাগজ বা সরকারি কোনো ম্যাপ থাকলে তারা সেটি দেখাক।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, স্থানীয় মসজিদের কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা দিয়ে সাইস্তা মিয়া গং ও আলাউদ্দিন গং দীর্ঘদিন থেকে যাতায়াত করতেন। এটা ঠিক যে, রাস্তাটি কাটায় স্থানীয়দের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন