চৈত্র ও বৈশাখ মাসে রুক্ষ হয়ে ওঠে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রকৃতি। এরই মধ্যে প্রশান্তি ও শোভাবর্ধন করছে পথের দু’ধারের সারিবদ্ধ তালগাছ। খরা ও বজ্রপাতে প্রকৃতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে এভাবেই লাগানো হয়েছে তালগাছ। স্থানীয় এমন একটি সড়ক তালসড়ক নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
আশির দশকে তালপাখার বাতাস না হলে মন জুড়াত না। বর্তমানে এসবের ব্যবহার খুবই কমেছে। কিন্তু আজও তালের পিঠা, গুড়ের পায়েস কিংবা তালের রুটি না খেলে বাঙালির মন জুড়ায় না।
আর বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তালগাছের তো কোনো বিকল্পই নেই। তাই বিভিন্ন সড়ক, বাড়ি ও জমির ধারে লাগানো হয়েছে তালগাছ।
সবুজ মাঠের বুক চিরে নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজিনগর ইউনিয়নের অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম ঘুঘুডাঙ্গা। মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে প্রায় ৬শ টি তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে। বৃক্ষপ্রেমী ও ভ্রমণ পিয়াসীরা বেড়াতে আসেন এ তালসড়কে।
স্থানীয় সূত্রে ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে তালগাছসহ অন্যান্য বড় বড় গাছ হারিয়ে যাওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গিয়েছে। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা মাঠে-খাটে কাজ করতে গিয়ে মারাও যাচ্ছেন।
উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের ফারুক বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এ সড়কটি তালতলি হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ প্রতিদিনই দেখতে আসছে। তালতলিতে স্থায়ীভাবে কয়েকটি দোকান হওয়ায় বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে।
বৃক্ষপ্রেমী মোস্তাকিন বলেন, ফেসবুক ও ইন্টারনেটে এ জায়গাটির কথা শুনেছি। তবে কখনো আসা হয়নি। জায়গাটি অনেক সুন্দর।
হাজিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তালগাছের ছায়ায় এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করি। সড়কের দুই পাশে দেখা মিলবে সবুজের ফসলের ক্ষেত। এটি একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে অন্যদিকে এ জায়গাটি পর্যটকদের কাছে এখন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, গ্রামে এখন তেমন তালগাছ দেখা যায় না। এখানে একসঙ্গে অসংখ্য তালগাছ এবং নির্মল পরিবেশ দেখে সত্যি মুগ্ধ হই। তালগাছ শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মন্তব্য করুন