ময়মনসিংহের ত্রিশালে রাস্তা কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এক সপ্তাহ ধরে কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এতে আড়াই কোটি টাকায় নির্মিত একটি ব্রিজ অকেজো হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী ইজারাবন্দ গ্রামের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর হতে ত্রিশাল-পোড়াবাড়ী সড়কের চিকনা ভায়া ছলিমপুর সড়কটির প্রায় তিন কিলোমিটার পাকা। এরপর প্রায় দুইশ মিটার কাঁচা রাস্তার পরই অলহরী নদীর (নাগেশ্বরী নদী) ওপর প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডি'র একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ব্রিজ ব্যবহার করে মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী ইজারাবন্দ, জয়দা, ধূরধূরিয়া (ফুলবাড়ীয়া) গ্রামের বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন অস্থায়ী বাঁশ-কাঠের তৈরি ব্রিজে চলাচল করা এ বিপুলসংখ্যক মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সম্প্রতি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী ত্রিশাল ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামের মুষ্টিমেয় স্থানীয় কতক লোকের বিরুদ্ধে নিজস্ব স্বার্থে অটোস্ট্যান্ড নিজেদের এলাকায় রাখতে রাস্তা কেটে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ত্রিশাল উপজেলার ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
তবে এ বিষয়ে উল্টো কথা বলছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, অটোস্ট্যান্ড নিয়ে কথা হলেও মূল বিষয় ব্রিজ হওয়ার আগে ওই পাড়ের লোকজন রাস্তার জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলে রাস্তার জমি নিয়েছিল। এখন তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানা করছে।
ভুক্তভোগী এম এ আল ফারুক বলেন, ‘আমাদের অবহেলিত কয়েকটি গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর এই ব্রিজটি হয়েছে। এতে আমাদের মালামাল পরিবহনসহ যাতায়াতের সময় এবং খরচ দুটিই কমেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো নদীর ওই পাড়ের কতক লোভী মানুষের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা ব্রিজের সুফল ভোগ করতে পারতেছি না। তারা রাস্তা কেটে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কথা হলো আমাদের কয়েকটি গ্রামের যাত্রীদের ব্রিজ পার হয়ে হেঁটে তাদের ওখান থেকে অটোতে উঠতে হবে। এলাকাবাসী আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই, প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।’
জমিদাতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সবার সুবিধার কথা চিন্তা করে অটোস্ট্যান্ড নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম সবার সাথে বসে যেভাবে সুবিধা হবে সেভাবে করতে। কিন্তু মূল বিষয় সেটা না, মূল বিষয় হলো তাদের কথা অনুযায়ী জমির মূল্য হিসেবে টাকা দেওয়ার শর্তে আমরা তাদের জমির ব্যবস্থা করে দেই। এখন বেশ কয়েকবার তারিখ করেও টাকা না দিয়ে তারা বিভিন্ন তালবাহানা করছে। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারও জানে।’
ত্রিশাল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. হাসিমুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনার পরে আমি ওখানে গিয়ে কাউকে পাইনি। আশপাশের লোকজন বলল, জমিদাতাদের না জানিয়েই রাস্তার মাপ নেওয়ায় জমিদাতারা রাগ করছে। রাস্তার সংযোগ ছাড়াই ব্রিজ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ব্রিজ হওয়ার আগে ওখানে কোনো রাস্তা ছিল না, পরে আমি রাস্তা করে দিয়েছি। তবে রাস্তা কেন কাটল সেটা আমি বলতে পারব না।’
ত্রিশাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসাইন কালবেলাকে বলেন, আমি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিষয়টি অবগত না। তবে শুনেছি রাস্তা কেটেছে। খোঁজ নিয়ে দেখবো, যদি রাস্তা কেটে থাকে তবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ত্রিশাল উপজেলার ইউএনও জুয়েল আহমেদ বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন