কুমিল্লায় গোমতী নদীর চরে চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়ার। পলি মিশ্রিত চরের মাটি এ সবজি চাষের বেশ উপযোগী। মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন তাই বলছে।
সরেজমিনে কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়। কিন্তু কুমিল্লা আদর্শ সদর ও বুড়িচং উপজেলার গোমতী চরে মিষ্টি কুমড়া সারা বছরই পাওয়া যায়।
এ এলাকায় মিষ্টি কুমড়া ছাড়াও মৌসুমি সবজি গোল আলু, পটোল, শিম, বেগুন, লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙা, বেগুন, চিচিঙ্গা, টমেটো ও করলাসহ বিভিন্ন শাকসবজিও চাষ হচ্ছে। এসবের ফলনও বেশ ভালো।
কুমিল্লা কৃষি অফিস জানায়, মৌসুমভিত্তিক নিরাপদ শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ অঞ্চলের মাটি অপেক্ষাকৃত উর্বর; তাই শাকসবজি আবাদে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সবজির আবাদ দিন দিন বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে গোমতীর চরে আদর্শ সদর ও বুড়িচং উপজেলার অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তেমন একজন কৃষক মামুন মিয়া। এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে আবাদ করা ফুল কপির ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেছিলেন।
ফুলকপি তোলার পরে কুমড়ার গাছ ছড়িয়ে পড়ে সারা ক্ষেতে। ফুলকপি ক্ষেতে কুমড়া চাষ করায় বাড়তি কোনো খরচ করতে হয়নি।
এক শতাংশ জমিতে ১৫ প্যাকেট মিষ্টি কুমড়ার বীজ, দুইবার হালকা সেচ, একবার নিড়ানি ও সামান্য পরিমাণ জৈব সার দিতে হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন।
এ কৃষক বলেন, ‘আগে না বুঝে অনেক কিছু চাষ করতাম। তাতে লাভ কম হতো। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে কয়েক বছর ধরে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করি। এতে লাভ বেশি হওয়ায় এখন সবাই মিষ্টি কুমড়ার দিকে ঝুঁকেছেন।’
আরেক কৃষক আবুল কাসেম বলেন, ‘উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিচ্ছেন। এতে দাম কিছু কম পেলেও সময় ও শ্রম বেঁচে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। এখন পুরোপুরি মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।’
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, এ বছর দুই উপজেলায় গোমতীর চরে তিন হাজার একরের বেশি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় শত একর জমিতে চাষ করা ফুলকপির ক্ষেতে কুমড়ার আবাদ করা হয়েছেন। সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।
মন্তব্য করুন