শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাহাড়ের বাঁকে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ভাঁট ফুল

মাটিরাঙ্গার চড়পাড়ায় ফোটা ভাঁট ফুলের দল। ছবি : কালবেলা
মাটিরাঙ্গার চড়পাড়ায় ফোটা ভাঁট ফুলের দল। ছবি : কালবেলা

পথ চলতে বুনো একটি ফুলের দেখা মেলে প্রায় সব স্থানে। পথিকের দৃষ্টি এড়ানো সম্ভব নয় বলেই অপলক দৃষ্টিতে এ ফুলটির দিকে চেয়ে থাকার মধ্যে এক ভীষণ রকমের আনন্দ কাজ করে। নিজেকে তখন প্রেমিক বা কবি ভাবার আনন্দে অনেকটা আবেগ নিয়েই ফুলটি ছিঁড়ে নিয়ে যান অনেকে। বলছিলাম খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন পথে-প্রান্তরে শ্বেত-শুভ্রতায় ছড়ানো ভাঁট ফুলের কথা। অঞ্চল বিশেষে নামের ভিন্নতা থাকলেও এ উপজেলায় ভাঁট ফুল নামে পরিচিত এই ফুল।

এটি গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি বুনো ফুল। এ ফুলে বিমোহিত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মুখ কবিতায় লিখেছেন- ‘ভাঁট আশঁ শ্যাওড়া বন বাতাসে কী কথা কয় বুঝি নাকো, বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে, পৃথিবীর কোনো পথে দেখি নাই হায়, এমন বিজন পথের ধারে দু প্রান্তে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম গ্রহন করে থাকে’। ভাঁট বা ভাইট ফুল নিয়ে কবির এমন বর্ণনার বাস্তবতায় মাটিরাঙ্গার চড়পাড়ায় দেখা মেলে ভাঁট ফুলের।

রাস্তার দুই ধারে, পুকুরপাড়ে, ঝোপঝাড়সহ নানা পরিত্যক্ত জায়গায় ভাঁট ফুল প্রকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে শ্বেত-শুভ্রতায় ফুটেছে থোকা থোকা ফুল। অনেকটা নীরবে বিলিয়ে দিচ্ছে সৌন্দর্য।

ভাঁট গাছের প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয় এ ফুলের গাছ। এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদন্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত ফুল ফোটে। এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এ ফুল। ফুল ফোটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে।

ভাঁট উদ্ভিদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি তোতো হওয়ার কারণে ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে তার। বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে এ ফুলের রস ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত সেরে যায়। তাছাড়া অনেকে কৃমি দূর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন। চর্মরোগে নিয়মিত ফুলের রস মালিশ করলে উপশম মেলে। ওই গাছের পাতার রস গ্যাস নির্মূলসহ ছোটদের মুখে অরুচি, পেট ফাঁপা ও জ্বর সারাতে কার্যকরী। তাছাড়া গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাইট পাতা বেটে দিলে উকুন মরে যায়। বসন্ত শেষে ভাঁট গাছ কেটে রান্নার জ্বালানির চাহিদা মেটানো হয়।

মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন হেলাল বলেন, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বর্তমান প্রজন্ম এ গাছটির ভেষজ গুণাগুণ জানে না বলেই ঝোপঝাড় মনে করে কেটে ফেলা হচ্ছে ভেষজ ওষুধিগুণ সম্পন্ন এ ফুলগাছটি। আগে সব জায়গায় ভাইট গাছ দেখা যেত। এখন বসতবাড়িসহ ফসলি জমি বেড়ে যাওয়ায় ঝোপঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া কীটনাশক প্রয়োগ, বন-জঙ্গল পরিষ্কার, ছাড়াও প্রতি বছর রাস্তাঘাট সংস্কার করণে কেটে ফেলা হচ্ছে মহামূল্যবান এ গাছ।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, ভাটঁ উদ্ভিদ অবহেলায় ও অযত্নে চাষ ছাড়াই অনেকটা প্রকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত গাছটিতে ফুল ফোটে। ফুলটির নির্মাণশৈলী নানা কারুকাজে ভরা। এ ফুলের পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কান্ডকে প্রকৃতি নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে। ফুলের পুংকেশরই এ ফুলের প্রধান সৌন্দর্য।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, ভাঁটফুল বা ঘেটু গুল্মজাতীয় বুনো ফুল গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযত্নে ফুটে থাকে। এই ফুল দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ভাঁট বা ঘেটু পুজা করে থাকে বলে তাদের কাছে ভাঁটফুলের অনেক কদর রয়েছে। এ গাছের ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে। এই উদ্ভিদ প্রকৃতি থেকে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাই ওষুধিগুণাগুণ ও বুনো সৌন্দর্য উপভোগে ভাইট ফুল রক্ষা করা জরুরি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকার খাবারের ঝালে মজেছেন ইরানি ফাকরি

শেখ হাসিনা-কামালকে ফেরাতে সরকারের নতুন কৌশল

পুনরায় দুঃসংবাদ পেলেন বিএনপির এক নেতা

সেই বিচারকের মোবাইল ফোন ও চশমা উদ্ধার

তারেক রহমানের জন্মদিনে শীতবস্ত্র বিতরণ

নিউমুরিং টার্মিনালের চুক্তির সব কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ

সিলেটের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না শুক্রবার 

আ.লীগের ৫ শতাধিক সমর্থকের নামে চার মামলা, গ্রেপ্তার ২২

নির্বাচনের আগে ইসির ৯ কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন

স্ত্রী হারালেন তোফায়েল আহমেদ

১০

রাতে ৫৬ নেতাকে সুখবর দিল বিএনপি

১১

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে গ্রেনেড, বাড়িতে নিয়ে যান কৃষক

১২

ইতালি যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের দুই যুবকের মৃত্যু

১৩

জিম্বাবুয়ের কাছে লঙ্কানদের লজ্জার পরাজয়

১৪

প্রথমবারের মতো কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে পাকিস্তান

১৫

গভীর রাতে সাংবাদিক-ব্যবসায়ীকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় টিআইবির উদ্বেগ

১৬

২০২৬ বিশ্বকাপের প্লে-অফের ড্র চূড়ান্ত

১৭

ব্রাকসু নির্বাচনে তপশিল পরিবর্তন, জানা গেল ভোটের নতুন তারিখ

১৮

নিউইয়র্ক এলেই নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি মামদানির

১৯

শীত কবে থেকে বাড়তে পারে, জানাল আবহাওয়া অফিস

২০
X