গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়েছেন অবৈধ আবাসন ব্যবসার নামে প্রতারণায় অভিযুক্ত সেই মোস্তাফিজুর রহমান। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এমএম) আদালত-১-এর বিচারক মহিদুল ইসলাম তাকে জামিন দেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এটিএসআই ও আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করার মামলা ছিল। এই মামলায় তার জামিন হওয়ার কথা নয়। আসামিকে অন্ততপক্ষে ১৫ দিন জেলহাজতে থাকার কথা। তবে কীভাবে আসামি জামিন পেলেন তা জানি না।’
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে বোয়ালিয়া মডেল থানা হাজত থেকে আদালতে পাঠানো হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম এমএম-১ আদালতে জামিন আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিন পাওয়া আসামি মোস্তাফিজুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোটাহাট উপজেলার আব্দুর রাকিবের ছেলে।
এর আগে গত সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে প্রতারক মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার এজাজুল হক নামের এক ব্যক্তি এ মামলাটি দায়ের করেন। এজাজুল হক অভিযোগ করেন, তার কাছে একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা নেন মোস্তাফিজ। কিন্তু তিনি ওই ফ্ল্যাটটি না দিয়ে উলটো এজাজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সমস্ত কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নেন।
এদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ৬৩ লাখ টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে আরও একটি অভিযোগ দেওয়া হয় বোয়ালিয়া থানায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক নারী সেই অভিযোগ দেন। তবে পুলিশকে মধ্যস্থতা করে তার নামে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য মোস্তাফিজকে চাপ প্রয়োগ করতে অভিযোগটি দেন সেই নারী।
ওই নারীর অভিযোগ, নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনে মোস্তাফিজ ৬৪ লাখ টাকা দাম ধরে তার কাছে বিক্রি করেন। এরই মধ্যে ওই নারী মোস্তাফিজকে ৬৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এখন আরও ১১ লাখ টাকা বেশি দাবি করছেন মোস্তাফিজ। ওই টাকা না দিলে ওই নারীকে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন মোস্তাফিজ।
ওই নারী এর আগে এক রাজশাহীর সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। মেয়রের হস্তক্ষেপে তিনি ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও তাকে রেজিস্ট্রি দেননি মোস্তাফিজ।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, ‘আসামি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অনেকগুলো প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে থানা হাজত থেকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে শুনলাম আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, মাত্র ১০-১২ বছর আগেও রাজশাহীর একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহকারী ছিলেন মোস্তাফিজ। পড়াশোনার খরচ জোগাতে প্রয়াত এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে বাবা এবং তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানাকে মা পাতিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। তাদের কাছ থেকেও প্রতারণা করে ৯০ লাখ টাকা এবং ৩ কাঠার একটি জমি আবাসন ব্যবসার নাম করে নেন মোস্তাফিজ।
এরপর থেকে মোস্তাফিজের উত্থান শুরু হয় রাজশাহী নগরীতে। একের পর এক প্রতারণা করে মাত্র পাঁচ-সাত বছরের মাথায় সেই মোস্তাফিজ যান কোটিপতি বনে। আর এই প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে অল্প সময়েই ফুটপাত থেকে পৌঁছে যান ‘রাজপ্রাসাদে’।
মন্তব্য করুন