আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৫ এএম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বসন্ত গায়ে মেখে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুল

বসন্ত গায়ে মেখে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুল ফুল। ছবি : কালবেলা
বসন্ত গায়ে মেখে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুল ফুল। ছবি : কালবেলা

ষড়ঋতুর রূপান্তরে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। প্রতিটি ঋতুই নিজস্ব সক্রিয়তায় প্রকৃতির ওপর তার নিজস্ব প্রভাব ফেলে। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতি বসন্ত গায়ে মেখে সেজেছে রঙিন সাজে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কচি পাতার সবুজ সমারোহ। বসন্ত গায়ে মেখে রঙিন হয়ে উঠেছে শিমুলের ডালপালা। সবুজের মধ্যেই প্রকৃতি যেন সেজেছে শিমুল ফুলের রক্তিম শোভায় নতুন এক রূপে। গাছের ডালে ফুটে থাকা এসব শিমুল ফুল পাখিদের পাশাপাশি মানুষের মনকেও যেন রাঙিয়ে তুলছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দুই দশক আগেও ব্রাহ্মণপাড়ার জনপদে যে পরিমাণ শিমুল গাছ দেখা যেত এখন আর তেমন একটা দেখা মেলে না। তবে এ সময়টায় শিমুল ফুল প্রকৃতিতে সৌন্দর্যের নতুন এক মাত্রা যোগ করে।

তথ্যসূত্র বলছে, শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোমবাক্স সাইবা লিন’। এর ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। এটি মালভেসি পরিবারের একটি গণের নাম। এরা পশ্চিম আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ার উপউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি।

শিমুল গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষ দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখে ফল পেকে ফেটে বৈশাখী বাতাসে শিমুল তুলা ওড়ে। এই তুলার সাথে বীজ উড়ে গিয়ে যেখানেই পড়ে সেখানেই নতুন করে তুলা গাছ জন্মে, এভাবেই বংশবিস্তার ঘটে। তবে কাণ্ডের মাধ্যমেও এর বংশবিস্তার হয়।

শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না, গাছটি আমাদের অনেক উপকারেও আসে। এই গাছে রয়েছে নানা উপকারিতা এবং অর্থনৈতিকভাবেও বেশ গুরুত্ব বহন করে। এই গাছ থেকে তুলা আহরণ করে তুলা বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। এ ছাড়াও এই গাছের রয়েছে ভেষজ গুণ। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বালিশ, তোষক ও লেপ তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় শিমুল গাছে এখনো শোভা পাচ্ছে রক্তিম ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। পাখিদের পাশাপাশি মানুষও শিমুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন। সড়কের পাশে, পুকুর পাড়ে ও বাড়ির পাশে শিমুল গাছে রক্তিম ফুল বাতাসে দোল খেতে দেখা যায়। পথচারীসহ দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে সবুজের মাঝখানে লাল হয়ে ফোটে থাকা শিমুল ফুল। পাশাপাশি বসন্তের ছোঁয়ায় গাছে গাছে নতুন সবুজ পাতার সবুজাভ দৃশ্যে মন জুড়িয়ে যায়। তবে এরইমধ্যে কোনো কোনো গাছে শিমুল ফল পোক্ত হতে শুরু করেছে।

উপজেলার নাল্লা গ্রামের আব্বাস খান বলেন, প্রতি বছরই এই সময় উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা ঘাটের দু’পাশে শিমুল গাছে ফুল দেখা যায়, যা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। তবে আগের চেয়ে শিমুল গাছ এখন অনেক কম।

দুলালপুর গ্রামের মাহবুব আলম নাদিম ও বেনজির আহমেদ বলেন, শিমুল ফুলের সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করবে যে কাউকে। কাজ থাকায় সময় সুযোগ হয় না ঘোরার। আগের মতো অহরহ দেখা মেলে না শিমুল গাছের। অনেক দিন ধরে শিমুল ফুল দেখার পরিকল্পনা ছিল। তাই সুযোগ হওয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে এসেছি। শিমুল ফুল দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।

নাল্লা উত্তরপাড়া গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, উপজেলার দুলালপুর ও নাল্লা দুই গ্রামের দুই কিলোমিটার সড়কে পাশে প্রায় অর্ধশত শিমুল গাছ আছে। বর্তমানে এগুলোতে ফুল ফুটেছে। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন শিমুল ফুল দেখতে। এ উপজেলার অনেক রাস্তার একসময় অসংখ্য শিমুল গাছ দেখা যেত। বসন্ত এলে শিমুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে গ্রামীণ পরিবেশ বিমূর্ত হয়ে উঠত। দিন দিন পরিবেশ থেকে শিমুল গাছ কমে যাচ্ছে।

অলুয়া এলাকার মো. শরীফুল ইসলাম জানায়, তার বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে ১টি শিমুল গাছ রয়েছে। শিমুল গাছে এবার যেন অনেক আগেই ফুল ফুটেছে। এই গাছ থেকে ৩ হাজার টাকার তুলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

দর্পনারায়ণ পুর এলাকার মো. আবুল খায়ের বলেন, একসময় রাস্তা ঘাটের দুই পাশে পুকুর পাড়সহ গ্রামের আনাচ-কানাচে শিমুল গাছ ছিল। শিমুল গাছ আর সেভাবে চোখে পড়ে না, কারণ রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে, বাড়ি ঘর তৈরি এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে অনেকেই গাছগুলো কেটে প্রকৃতিকে নষ্ট করছে। এতে প্রকৃতি থেকে শিমুল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

দুলালপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মিনারুল ইসলাম বলেন, তার বাড়ি প্রধান ফটকে একটি ও পুকুর পাড়ে একটি শিমুল গাছ রয়েছে। এগুলোতে এখন ফুল এসেছে। তবে রাস্তা দিয়ে লোকজন আসা যাওয়ার পথে শিমুল গাছ যেন নজর কাড়ছে। তিনি আশা করছেন এবার ৫ হাজার টাকার তুলা বিক্রি করতে পারবেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকৃতি থেকে কিছু কিছু গাছ প্রাকৃতিকভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর কিছু কিছু গাছের লালন না করে আমরা বিলুপ্ত করে ফেলি। শিমুল গাছ এরকমই একটি গাছ যা আমাদের অবহেলার কারণে বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। ছোট বেলায়ও দেখেছি বসন্ত এলেই গাঁয়ের পথে বাড়ির পাশে লাল রংয়ে সেজে উঠতো অনেক শিমুল গাছ। এখন হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, শিমুল ফুল না ফুটলে যেন প্রকৃতিতে বসন্তই আসে না। বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিবেশের সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চার একটি যোগ সূত্র রয়েছে। ঠিক সেভাবেই বসন্ত এলেই চলে আসে শিমুল ফুল। আমাদের ঋতু বৈচিত্র্যের এসব অনুষঙ্গকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাঙ্গালিনী সুফিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়ালেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান পাকিস্তানের

ইরানের পাশে দাঁড়াল পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তান

ইসরায়েলকে সাহায্যকারী ৩ দেশকে ইরানের হুমকি

পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক?

জাতীয় স্টেডিয়ামে কূটনীতিকদের হারিয়ে মাঠ মাতাল ‘টিম অ্যাডভাইজারস’

লন্ডন বৈঠক নিয়ে জামায়াতের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন সালাহউদ্দিন

আসামি ধরতে গিয়ে সড়কে ঝরল পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণ

আবারও বাংলাদেশে ফিরছেন কোচ পাইবাস

ধামরাইয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

১০

চার জেলায় একদিনে ৪৩ জনকে পুশইন 

১১

আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত কর্মীর মৃত্যু

১২

করোনা-ডেঙ্গুর প্রকোপ / এইচএসসি পরীক্ষা পেছাচ্ছে না : বোর্ড চেয়ারম্যান

১৩

ইরানের জনগণকে বিদ্রোহ করার ডাক দিয়ে নেতানিয়াহুর বার্তা

১৪

আয়রন ডোম চুরমার, ইসরায়েলি সদর দপ্তর গুঁড়িয়ে দিল ইরান

১৫

একসঙ্গে ছয়টি বিসিএসের সময়সূচি ঘোষণা পিএসসির

১৬

সড়কে নিহত সেই ৫ বাসযাত্রীর পরিচয় মিলেছে

১৭

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপের কথা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

১৮

বাবার মৃত্যুর ৭ দিন পর বাসচাপায় প্রাণ গেল ছেলের 

১৯

গোপনে ইসরায়েলকে ভয়ংকর অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

২০
X