নীলফামারীর ডিমলায় দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের বাজার তদারকি বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম এখনো চোখে পড়েনি। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে সরবরাহের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণের মূল্য বৃদ্ধি করে ফাঁয়দা হাসিল করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং ফুলেফেঁপে উঠছে ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাংসসহ সবজির কোনো দোকানে পাওয়া যায়নি মূল্য তালিকা।
এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির ভোগ্যপণ্য যেমন চাল-ডাল, গরম মসলা, কলা, খেজুর, আপেল, আঙ্গুর, মাছ, ডিম, গরু-খাসি ও ব্রয়লার মুরগির মাংস, সবজি, আদা, রসুন, দুধসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ফল ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, আমরা দাম বাড়াইনি, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এখানে আমাদের কি করার আছে!
ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে আসা শ্রমজীবী জুলহাস মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন আগেও যেসব পণ্যের দাম হাতের নাগালে ছিল, কিন্তু রমজান মাসে হঠাৎ করে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ফলের দাম অনেক বেড়েছে। এমন চলতে থাকলে ক্রেতারা কীভাবে বাজার করবে। রমজান মাসে ইফতার করবে?
বাজারে দেখা যায়, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটের অজুহাতে প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন। ফলে বর্তমানে চালের প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা, ৯০ টাকা কেজির মুশুর ডাল ১১০ টাকা, ৯০ টাকার ছোলা ১১০ টাকা, ১৩৪ টাকার পামওয়েল ১৪২ টাকা, ৫৬ টাকার বেসন ৯৫ টাকা, ৫২ টাকার এ্যাংকর ডাল ৭৮ টাকা, ১০ টাকার লেবু ৪৫-৫০ টাকা, ২৫ টাকার আলু ৫০ টাকা, পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা, রসুন কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা, আদা প্রতি কেজিতে ৫০-৬০ টাকাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মসলা জাতীয় পণ্যসহ প্রায় প্রতিটি পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকলেও প্রশাসনের নেই বাজার তদারকি বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম। ফলে যে যেভাবে পারছেন মূল্য বৃদ্ধি করে ফায়দা হাসিল করছেন।
ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যত প্রশাসনের বাজার তদারকি না থাকায় দিন দিন বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা, তাদের দাবি প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা বাড়ছে।
গয়াখরিবাড়ি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো তদারকি হচ্ছে না, সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে ভোক্তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। পাইকারি বাজার থেকে বিক্রেতারা যে মূল্যে পণ্য কিনে আনেন তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন নানা অজুহাত দেখিয়ে। রমজান মাসে এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। দ্রুত বাজার তদারকির প্রয়োজন।
শুটিবাড়ি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, সরবরাহ সংকট থাকায় কিছুটা মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। তবে আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক যে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে আমরা সেটি নিয়েই মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। চলতি মাসে দুটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আগামীতে আরও হবে।
ডিমলা ইউএনও উম্মে সালমা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সকলের সমন্বয়ে কাজ করছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বাজার তদারকি চলমান।
মন্তব্য করুন