মাত্র এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডে বলতে পারেন পৃথিবীর সব দেশের নাম। আর বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নাম বলতে পারেন ২০ সেকেন্ডে। শুধু তাই নয় দ্রুততম সময়ে অবলীলায় বলতে পারেন দেশের সকল উপজেলাসহ মহান আল্লাহর ৯৯ নাম।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিস্ময়কর এই প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তির নেই কোনো পড়াশোনা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। যিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। নাম তার বাদশা মিয়া।
বাদশা মিয়া রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাদ গ্রামের বাসিন্দা। অভাবের সংসারে অল্প বয়স থেকেই ভ্যান চালান তিনি। এলাকায় জীবন্ত মানচিত্র নামে পরিচিত বাদশা মিয়া। ছোটবেলায় এলাকার মক্তবে পড়ার সুযোগ হলেও নিজের নামটি ছাড়া আর কিছু পড়তে বা লিখতে পারেন না তিনি। তবে অদম্য ইচ্ছা, সাধনা ও ছোট বোনের সহায়তায় এসব কিছু রপ্ত করেছেন বলেন তিনি।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে বাদশার এলাকায় গিয়ে কথা হয় বাদশা মিয়ার সঙ্গে। ছন্দে ছন্দে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘মনে অনেক কষ্ট, বুকে অনেক ব্যথা। এতকিছু শিখেও আমি পাইনি সফলতা। তাই তো এখনো চালাই অটোরিকশা, নাম আমার বাদশা, বাসা পীরগাছা। দুঃখে ভরপুর, জেলা আমার রংপুর।"
ছন্দে ছন্দে নিজের পরিচয় তুলে ধরার পর একে একে তিনি বলতে থাকেন পৃথিবীর ২০৬টি দেশের নাম, ৬৪টি জেলার নাম, দেশের সবকটি উপজেলা ও মহান আল্লাহর ৯৯ নাম। শুধু মুখস্থ নয়, যেন সবকিছু তার ঠোঁটস্থ।
লেখাপড়া না করেই কি করে তিনি এত কিছু রপ্ত করলেন তার উত্তরে বাদশা বলেন, অনেক দিন আগে গ্রামের মেলা থেকে একটি মানচিত্র কিনে আনি। সেই মানচিত্র দেখে ছোটবোন দেশের নাম বলত, আর আমি শুনে তা মুখস্থ করতাম। আর এভাবেই একসময় সবকিছু মুখস্ত হয়ে গেছে।
বাদশার বাবা আব্দুল হামিদ কালবেলাকে বলেন, ছেলের প্রতিভা দেখে ভালো লাগে। অভাবের কারণে ছেলেকে আমি লেখাপড়া করাতে পারিনি। তারপরও যা শিখেছে তার জন্য আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি।
মা মোর্শেদা বেগম কালবেলাকে বলেন, আমরা খুব গরিব মানুষ। ছেলেটা আমার ভ্যান চালায়। ছোটবোনের সাহায্যে ছেলেটা আমার এগুলো শিখেছে। এতে আমরা খুব খুশি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল বলেন, বাদশা মিয়া আমাদের এলাকার গর্ব। তিনি আল্লাহর ৯৯ নামসহ পৃথিবীর সব দেশের নাম, বাংলাদেশের জেলা, উপজেলার নাম কম সময়ে বলতে পারেন। তিনি একটা জীবন্ত মানচিত্র।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশীদ বলেন, বাদশা মিয়া অনন্য প্রতিভার অধিকারী। আমরা চাই তার এই প্রতিভা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে যেন ওঠে। এদের নিজের থাকার মতো জমিটুকুও নাই। অন্যের দান করা এক শতক জমিতে থাকে। আমি সমাজের ধনবান ব্যক্তিদের নিকট বাদশা মিয়াকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে তার এই প্রতিভাকে যেন পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়।
স্কুলশিক্ষক ফেরদৌসুর রহমান বলেন, তার এই প্রতিভা কোনো সাধারণ কোনো বিষয় না। সে বিষ্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। ছেলে হিসেবেও সে খুব ভালো। তার এই প্রতিভা দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে। আমরা এলাকাবাসী তার জন্য গর্বিত।
মন্তব্য করুন