বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির সময় পুলিশ ও আনসারদের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি নিয়ে সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা সদর এলাকায় সোনালী ব্যাংক, উপজেলা মসজিদ ও আনসার ব্যারাক পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে আহত পুলিশ সদস্যকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
পরিদর্শন করেন তিনি। একই সঙ্গে উপজেলা মসজিদ ও আনসার ব্যারাক পরিদর্শন করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে ডাকাতির সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার আহত পুলিশ সদস্যকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবান রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার মো. মেহেদী হাসান, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে বুধবার সকালে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিঃশর্তে মুক্তি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর বন্ধ ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ ব্যাংক ডাকাতি ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সরকারি কর্মচারীরা। উপজেলা পরিষদ এলাকায় এ মানববন্ধন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন, সভাপতি হিসেবে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালেদ রাউজান।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রুমা উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় ৭০-৮০ জনের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সশস্ত্র সদস্যরা রুমা সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় সোনালী ব্যাংকের গ্রিল ভেঙে প্রবেশ করে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা নিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যায়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় টাইম ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে যায়। তিনি এখন কোথায় আছে এবং তার সঙ্গে কি ঘটেছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তবে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সন্ত্রাসীরা আনুমানিক দেড় থেকে দুই কোটি টাকা নিয়ে গেছে বলে অনুমান করা হলেও আসলে কি পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইউএনও ভারপ্রাপ্ত দিদারুল আলম জানান, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা লুট হয়েছে বলে জানা যায়। ম্যানেজার ফিরে না আসা পর্যন্ত কত টাকা লুট হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, ডাকাতির সময় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে দশটি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ব্যাংকের অদূরে থাকা আনসার ব্যারাক থেকে চারটি অস্ত্র ও ৩৫টি গুলি ছিনিয়ে নেয়-সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ওই সময় পুলিশ ও আনসারকে মারধর করে। এ সময় ব্যাংকের অফিসার্স কোয়ার্টারে থাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারধরের শিকার হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকে টাকাগুলো মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বান্দরবান সদর থেকে রুমা সোনালী ব্যাংকে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, এ সময় উপজেলা মসজিদ ঘেরাও করে মসুল্লিদের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। সশস্ত্র সদস্যের একটি অংশ উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যাংক থেকে প্রায় একশ গজ দূরে আলমগীর চা দোকানের সামনে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রহরা দেয়। তখন রুমা বাজার দিক থেকে আসা সাধারণ যাত্রী ও মোটরবাইকসহ যাত্রীদের আটকিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে লোকজন বেধড়ক পিটিয়েছে।
একইভাবে উপজেলা পরিষদের পশ্চিম দিকে সেগুন বাগান নিচে ছোট্ট কালভার্টের পাশে রাস্তা গতিরোধ করে মোটরবাইক ও যাত্রীদের আটকিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস যা থাকে সব ছিনিয়ে নিয়ে সবাইকে মারধর করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার ভুক্তভোগীরা জানায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে আধুনিক অস্ত্র ও মুখে কাপড় ঢাকা ছিল। তাই তাদের চেনা না গেলেও বাংলা ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের মধ্যে ফিশফিশে বম ভাষায় কথোপকথনের ভাষার সুর শুনতে পেয়েছিলেন- অনেক ভুক্তভোগী ও মারধরের শিকার হওয়া লোকজন।
আর এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে-কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে । তবে তাৎক্ষণিক কেএনএফ এর দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে, এলাকায় আতংক বিরাজ করায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে একটি সূত্র জানায় ব্যাংকে টাকা সংরক্ষণ করা লোহার বাক্সের তালা খুলতে পারেনি। মূলত এ কারণে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. নেজাম উদ্দিনকে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন