আশুলিয়ায় বাড়তি ভাড়া নিয়ে ঝগড়ার জেরে যাত্রীদের মারধরে চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়নি। বরং আরেকটি বাসের চাপায় তারা নিহত হয়েছেন। নিজেকে বাঁচাতে তিনিই যাত্রীদের মারধরে দুজনের মৃত্যুর মিথ্যা গল্প বানিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও হেলপারকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।
এ ঘটনার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার (৮ এপ্রিল) আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রামুখী মহাসড়কের লেনে ইতিহাস পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একটি দূরপাল্লার বাস পাশ দিয়ে চলে যায়। পরে বাসের গেট ঘিরে মানুষের ভিড়। যাত্রীরা যে যার মতো নামছেন। আহত অবস্থায় ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা মারা যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান ইতিহাস পরিবহনের বাসটির চালক সোহেল রানা ও কন্ডাক্টর হৃদয়। তাদের সঙ্গে থাকা বাসের হেলপার আব্দুর রহমান দাবি করেছিলেন, বাড়তি ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার জেরে যাত্রীরা তাদের মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে তারা মারা যান। এ সময় আব্দুর রহমান প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস্) আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, আব্দুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। গতকাল সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে যে বক্তব্য আব্দুর রহমান দিয়েছিলেন, তাতে আমাদের খানিকটা সন্দেহ হয়। তার বক্তব্য ছিল, ১০-১২ কিংবা ১৫ জন ব্যক্তি মিলে বাস থেকে নামিয়ে দুজনকে পিটিয়ে আহত করে। কিন্তু প্রাথমিক সুরতহালে এমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করি আমরা। তদন্ত করতে গিয়ে আমরা একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাই।
যিনি আমাদের জানান, এখানে দুই বাসের মাঝে চাপা খেয়ে সোহেল ও হৃদয় আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। আমাদের হাইওয়ে পুলিশের র্যাকার কর্মকর্তা ওই বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে গিয়েছিলেন, তার বক্তব্যেও সেখানে মারামারির কোনো তথ্য পাইনি।
এই প্রেক্ষাপটে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্থাৎ যিনি বাসের হেলপার পরিচয় দিয়ে এই ঘটনাগুলো বলেছিলেন, তার সঙ্গে আবারও আমরা কথা বলি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি প্রাথমিকভাবে এ রকম বলেন যে, ওই সময় তিনি নিজেই বাসটি চালাচ্ছিলেন। ‘মা-বাবার দোয়া পরিবহন’র অন্য একটি বাস তাদের বাম পাশে ছিল। সেই বাসটি যখন আগে যাচ্ছিল, তখন আব্দুর রহমান নিজে আগে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করে তার গাড়ি বাঁয়ে চাপান। নিহত দুজনের একজন রাস্তায় ছিলেন অর্থাৎ বাসের নিচে ছিলেন। আরেকজন বাসের গেটের দিকে ছিলেন। ইতিহাস পরিবহনের বাসটি যখন আকস্মিক বামে চাপানো হয়, তখন ওই দুজন বামে থাকা ‘বাবা মায়ের দোয়া’ নামের বাসটির সঙ্গে চাপা খান। এতে তারা আহত হলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তদন্তে আমরা এটাই পেয়েছি।
মন্তব্য করুন