সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ছোট বড় সব হাওরেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা যে যার মতো পরিবার-পরিজন ও শ্রমিক নিয়ে সোনালি ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ শ্রমিক দিয়ে হাতে ধান কেটে ট্রলি বা মহিষের গাড়িতে করে ধান শুকানো মাঠে নিয়ে আসছেন। আবার কেউ কেউ হাতে ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুত ধান কাটতে ব্যবহার করছেন ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার।
তবে বেশ কয়েকজন কৃষককের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ এবং এপ্রিলের শুরুতে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় হাওরে বৃষ্টির পানি জমে জমির মাটি নরম হয়েছে। তাই হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে। এতে শ্রমিকের ওপর চাপ বাড়ছে। এমন সময় শ্রমিক সংকট দূর করতে যাদুকাটা নদীর বালুমহালসহ বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্ক স্টেশনে কয়লা এবং চুনাপাথর পরিবহনের কাজ কিছুদিন বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তাহিরপুরে ছোট বড় মোট ২৩টি হাওরেই একযোগে চলছে ধান কাটা। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ১৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর এবং এর বাইরে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। টানা ২০ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব হাওরের ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি হাওরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সারাদিন কৃষক শ্রমিক দিয়ে অথবা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছে। ধান কাটা শেষে ট্রলি, মহিষের গাড়ি, অটো রিকশা বা নৌকা দিয়ে জমি থেকে কাটা ধান খলায় নিয়ে আসছেন। কোথাও আবার ধান শুকানোর খলায় নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরীরা ধান শুকাচ্ছেন। ধান শুকানো হয়ে গেলে সকলে মিলে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও আবার দেখা গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারী (ধান কাটার শ্রমিক) দলে দলে নিয়ে এসে নিজেদের থাকার ঘর তৈরি করে ধান কাটতে শুরু করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর পাড়ের কৃষক হাফিজ উদ্দিন ও অজয় কুমার দে বলেন, এবার বোর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। জমির ধানও পেকে কাটার উপযুক্ত হয়েছে। দিন ভালো হওয়ায় বিচ্ছিন্নভাবে কাটাও শুরু হয়েছে। তবে গেল কিছুদিনের বৃষ্টিতে জমির মাটি নরম থাকায় সব জায়গায় মেশিনে কাটা সম্ভব হচ্ছে না। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছরের মতো তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর বালু মহাল ও শুল্ক স্টেশন বন্ধ থাকেলে অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিককে হাওরে নিয়ে আসা যেত।
উপজেলার মাটিয়ান হাওর পাড়ের বড়দল গ্রামের উজ্জল মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে নিরাপদে ধান ঘরে তুলতে পারলেই আমরা খুশি। এই ফসলের ওপর নির্ভর করে আমাদের ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়া, হাট-বাজার, বিয়ে-শাদী সবকিছুই। কিছু ধান কেটে এখন রোদে শুকিয়ে গোলায় তুলা হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক সামাইয়ুন মিয়া বলেন, এখন নদীতে যে পরিমাণ পানি রয়েছে ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য তেমন একটা ঝুঁকি নাই। মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বিভিন্ন হাওরে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল এখন খরা দেওয়ায় আস্তে আস্তে এগুলো কমছে। তবে মাটি নরম থাকায় মেশিনে ধান কাটতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ-দৌলা জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাহির থেকে ধান কাটার শ্রমিক এসেছে। কৃষকদের কাজকে সহজ করতে ভর্তুকি মূল্যের কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন রয়েছে। এছাড়াও আমাদের মাঠ সহকারীরা সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে। কৃষকের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, এবারে বোরো ফসল ভালো হয়েছে। পাশাপাশি আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষক হাসিমুখে ধান কাটছে। তবে কোনো রকম যাতে শ্রমিক সংকট দেখা না দেয়, সে লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও যাদুকাটা বালুমহালসহ উপজেলার সকল শুল্ক স্টেশন বন্ধ রাখতে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ করেছি।
মন্তব্য করুন