বান্দরবানে থানচিতে মৈত্রী পানিবর্ষণের মধ্য দিয়ে মারমা সম্প্রাদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘মাহাঃ সাংগ্রাই পোওয়ে’ শেষ হয়েছে। টানা পাঁচ দিনব্যাপী পাহাড়ে গ্রামে গ্রামে এ উৎসবটি পালন করা হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ফুল সাংগ্রাই থেকে শুরু করে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মারমা সম্প্রাদায়ে উৎসবটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে।
সাংগ্রাই এর প্রধান আকর্ষণ হল মৈত্রী পানি বর্ষণ যেটিকে মারমারা বলে ‘রিলং পোয়েঃ’। সাংগ্রাই উৎসবের প্রথম দিন বুদ্ধস্নার পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত এই মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
সাংগ্রাইয়ের মৈত্রী পানিবর্ষণ খেলা কেবল মারমাদের নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া আর চীনের দাই জাতিগোষ্ঠীরাও এপ্রিলের মাঝামাঝিতে এই ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে। মায়নামারে এই ধরনের অনুষ্ঠানকে ‘থিনগন’ আর থাইল্যান্ড ও লাওসে এই অনুষ্ঠানকে ‘সংক্রান’ বলা হয়। থাই ভাষায় সংক্রান এর অর্থ হল পরিবর্তন। সাংগ্রাই আসলেই পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়াকেই বোঝায়। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে নতুন জুম চাষের মৌসুমের শুরুও সাংগ্রাইয়ের পরেই হয়ে থাকে। শুধু জুম চাষই নয়, মারমারা মাঘী পূর্ণিমার পর থেকে সাংগ্রাই এর আগ পর্যন্ত নতুন বিয়েই করে না অর্থাৎ সাংগ্রাইকে মারমারা নতুন বছরের শুরুসহ পুরনো সব জিনিসকে ঝেরে ফেলে নতুন করে শুরু করাকেই বোঝায়। আর তাই মারমারা এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্শীবাদ আর শুভাকাঙ্ক্ষার আশায় নতুন বছর উদ্যাপন করে থাকে।
প্রধান সাংগ্রাইয়ের পরেই বিভিন্ন জায়গায় রিলংপোয়ে এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটি শুধু এপ্রিলের ১৫ তারিখেই নয়, অনেক জায়গায় ১৬, ১৭ ও ১৮ তারিখেও আয়োজন করা হয় যেন সকলেই সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে। অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে মারমারা তাদের ঐতিহ্যবাহী ‘থামি’ (মেয়েরা) আর ‘লুঙ্গি’ (ছেলেরা) পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে থাকে। খুব সকালেই স্থানীয় এলাকার তরূণ-তরূণীরা সাংগ্রাই র্যালী করে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মারমা তরূণ-তরূণীরা ‘সাংগ্রাই মা ঞিঞীই ঞাঞাই, রিগ জাঃং কাঈ পাঃ মেঃ /অর্থ :এসো মিশি, সাংগ্রাইয়ের মৈত্রী পানি বর্ষণের উৎসবে’ গান গেয়ে দলে দলে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে থাকে।
এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পানি খেলা ছাড়াও ওইদিন সবার হাতেই একটা করে পানির বোতল থাকে। যার যাকে মন চায় সে তাকেই পানি ছিটাতে পারবে, এতে কেউ কোনো আপত্তি করে না বরং এটিকে আর্শিবাদ আর শুভ লক্ষণের প্রতীক হিসেবে ধরে নেয়।
এদিকে থানচি উৎসব উদযাপন কমিটি সভাপতি জানান, থানচির মত প্রত্যন্ত অঞ্চলের আমরা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে খুবই ব্যয়বহুল। এবারে উপজেলা বিভিন্ন পরিস্থিতি কথা মাথায় রেখে আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কম সময়ের শেষ করেছি।
তিনি আরও জানান, এবারে সাংগ্রাইং উৎসব কেন্দ্রীয়ভাবে থানচি সদরে ছাড়াও ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের তিনটি জায়গাতে মৈত্রী পানিবর্ষণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। পুরোনো বছরে সব দুঃখ কষ্ট ও গ্লানি মুছে দিয়ে আমরা নতুন বছর বরণ করে নিয়েছি।
মন্তব্য করুন