চোখের পানিতে ঝরে পড়ছে কতশত আক্ষেপ। ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনি, সবাই আছে, কিন্তু না থাকার মতোই। খোঁজ, খবর নেয় না কেউই। জীবনযুদ্ধে তাই তিনি একা। এখন কেবলই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা।
সন্তান আর নাতি-নাতনিদের মায়া মহব্বতের মধ্যে দিন কাটানোর কথা ছিল ১০৭ বছর বয়সী ডালিম খাতুনের। কিন্তু নিজ বাড়িতে একাকী রাত কাটাতে হয় বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ বৃদ্ধার।
৪০ বছর আগে স্বামী জসিম উদ্দিনকে হারান ডালিম খাতুন। দুই ছেলে ও চার মেয়ে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে মাকে রেখে চলে গেছে একে একে। এর মধ্যে মারা গেছেন এক মেয়ে। এখনও বিভিন্ন জায়গায় বহাল তবিয়তে আছেন বাকিরা। মায়ের খোঁজখবর পর্যন্ত নেন না তারা। এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেও এই অভাগা বৃদ্ধার খোঁজ নেননি কোনো সন্তান। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ডালিম খাতুন।
বয়সের কারণে চলাফেরা ও কাজ করা ডালিম খাতুনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির। তবুও সবই করতে হয় নিজেকেই। রান্না করতে না পারলে থাকতে হয় না খেয়ে। মাঝে মধ্যে খাবার দিয়ে যান প্রতিবেশীরা।
বৃদ্ধা ডালিম খাতুন বলেন, আমাকে কেউ দেখে না। এ ঘরের মধ্যে পড়ে যদি মরে থাকি কেউ তো জানবেই না। চার মেয়ের মধ্যে একজন মারা গেছেন। কেউ আমার দিকে ফিরেও চায় না।
অস্পষ্ট স্বরে ডালিম খাতুন আরও বলেন, তিনি বয়স্ক ভাতা পান। কিন্তু টাকার গন্ধে হঠাৎ হঠাৎ উদয় হন তার কোন এক ছেলে। ফুসলিয়ে তাকে শুন্য হাতে রেখে সব নিয়ে যান হাসতে হাসতে।
ডালিম খাতুনের এক প্রতিবেশী বলেন, এখানে ওনাকে দেখাশোনার কেউ নেই। আমার যারা আছি সহায়তা করি।
ডালিম খাতুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চকনিহাল গ্রামে। শতবর্ষী এই বৃদ্ধার দুঃখ দুর্দশা দেখে পাশে দাঁড়িয়েছেন মামুন বিশ্বাস নামের এক সমাজকর্মী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁজ পেয়ে তার মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই।
সেই সাহায্য থেকে বৃদ্ধা ডালিম খাতুনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নগদ টাকাসহ নতুন পরনের কাপড়, বিছানার চাদর, জায়নামাজ, চার্জার ফ্যান, জুতা, চালের বস্তা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার। বৃদ্ধার কাছ থেকে আবারও কেউ টাকা লুটে নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
মন্তব্য করুন