মধুমাস আসতে এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। আর এরই মধ্যে রাজশাহীতে আগাম জাতের কিছু লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। মৌসুমের শুরুতেই হঠাৎ বাজারে লিচু দেখে চোখ আটকে যাচ্ছে ক্রেতাদের। তবে দাম বেশি হওয়ায় কিছু ক্রেতা মৌসুমের প্রথম ফল হিসেবে কিনলেও ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই।
সোমবার (৬ মে) বিকেলে রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারসহ বেশকিছু বাজার ঘুরে বাজারে লিচু ক্রয়-বিক্রয়ের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৫৩০ হেক্টর জমিতে এবার লিচুর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টন। যদিও প্রচণ্ড খরা আর তীব্র গরমের কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার, বিন্দুরমোড়, লক্ষ্মীপুর, স্টেশন ও শালবাগান বাজার ছাড়াও শিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এই লিচু বছরের প্রথম ফল হিসেবে শখ করে বেশি দাম দিয়েই কিনছেন কেউ কেউ। আবার কেউ দাম শুনেই পিছু হটছেন।
নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, ৪-৫ জায়গায় লিচুর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কয়েকজন বিক্রেতা। সেখানকার একটি দোকানে লিচু কিনতে এসেছেন নগরীর সাগরপাড়া এলাকার রায়হান। তিনি বলেন, ‘আজ হঠাৎ করেই বাজারে লিচু দেখে সেখানে চোখ আটকে গেল। কিন্তু দাম চড়া। ক্রেতা একশত লিচুর দাম চাচ্ছে ৪৫০ টাকা। পরে দর-দাম করে ৪০০ টাকায় কিনলাম।
নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে লিচু বিক্রি করতে এসেছেন সাজেদুর রহমান নামের এক বিক্রেতা। তিনি কালবেলাকে বলেন, এই লিচুগুলো রাজশাহীর পবা উপজেলার ভুগরইল এলাকার একটি বাগানের। এগুলো আগাম জাতের লিচু হওয়ায় প্রতি বছরই মৌসুমের শুরুতে বাজারে ওঠে। এবারও উঠেছে। মৌসুমের প্রথম ফল হলেও স্বাদে-মিষ্টিতে অনন্য। তবে দাম একটু চড়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাগান থেকে কিনে এনেছি ৩৫০ টাকা দরে। আমাদেরও তো একটু লাভ করতে হবে। প্রথম দিন এক হাজার লিচু নিয়ে এসেছি। বাজারে নতুন ফল দেখে অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমার লিচু শেষ।’
আরেক ক্রেতা নগরীর শালবাগান এলাকার বাসিন্দা ক্রেতা এনায়েত বলেন, ‘প্রথম আজ বাজারে লিচু এসেছে। লিচু একটি অকর্ষণীয় ফল। দেখে বেশ ভালো লাগছে। দাম বেশি হওয়ায় অল্প পরিমাণে নিলাম।’
নগরীর শালবাগান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে তুলনামূলক লিচুর দাম একটু কম। আব্দুল হাই নামের এক লিচু বিক্রেতা বললেন, ‘এগুলো চারঘাটের লিচু। আমি একশত লিচু সাড়ে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’ সাখাওয়াত হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘সাহেব বাজার এবং লক্ষ্মীপুরে যে লিচু উঠেছে সেখানকার চেয়ে শালবাগানে এসে দেখলাম দাম একটু কম। তাই এখান থেকেই মৌসুমের প্রথম ফল হিসেবে ১০০ লিচু সাড়ে ৩০০ টাকায় নিলাম।’
রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশি জাতের কিছু লিচু গাছে আগাম পাকে। এগুলো খেতে কোনো সমস্যা নেই। এগুলো মিষ্টিও হয়। তবে মূল লিচু আসতে এখনও অনেক সময় লাগবে। সাধারণত এসব লিচু পেতে আমাদের মে মাসের শেষ দিকে বা জুনের শুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে সালমা বলেন, চলতি মৌসুমে আম ও লিচুর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা, প্রচণ্ড রোদ আর খরায় অর্ধেকের বেশি আম-লিচু আগেই ঝরে গেছে। আর বাজারে যে আগাম জাতের লিচু এগুলো খুব বেশি পরিপক্ব হয়নি। ২-৪ দিনের মধ্যেই বাজারে যে লিচু উঠবে তা সবচেয়ে ভালো হবে।
মন্তব্য করুন