স্ত্রী আমিরজান বেগম সকালে স্বামীকে মুড়ি খেতে দেওয়ার আগে নলকূপ থেকে পানি আনতে গিয়েছিলেন। সেখানে দেখেন আমগাছে ঝুলছে স্বামী মুজিবুর রহমান মাদবরের মরদেহ। জাতীয় জরুরি সেবার মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ দুপুর ১২টায় মরদেহ উদ্ধার করে।
শুক্রবার (১০ মে) সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের নয়ন মাদবর কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্ত্রীর দাবি পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ তার স্বামীকে হত্যা করেছে। প্রতিপক্ষের দাবি, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন তাদের ঝামেলা চলছিল। তাই তারা বলছেন নিজেরাই মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। পরে তাদের ফাঁসানো হচ্ছে।
নড়িয়া থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান এ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত মুজিবুর রহমান মাদবর (৬৫) নয়ন মাদবরকান্দি গ্রামের মৃত শামেদ আলী মাদবরের ছেলে। তার ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে।
নড়িয়া থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মুজিবুর রহমান মাদবরের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমিসহ আমার পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি তার বাড়ির পাশেই পূর্বপাশে আনুমানিক ১০ ফুট দূরত্বে একটি নলকূপের পাশের আমগাছে গলায় বৃদ্ধ মুজিবুর মাদবরের মরদেহ ঝুলছে। দড়ি কেটে আম গাছ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা জানতে চাইলে ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে মরদেহের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে গলার পেছনে ঘাড়ে দড়ির দাগ রয়েছে। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। পোস্টমর্টেমের জন্য মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসার পর বোঝা যাবে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। আর পরিবার অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত মুজিবর মাদবরের পরিবারের সঙ্গে চাচাতো ভাই সেকান্দার মাদবরের পরিবারের গ্রাম্য রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলে আসছে। হত্যা ও মারামারিসহ এ এলাকায় আনুমানিক পাল্টাপাল্টি ১৫টি মামলা চলমান। এ মামলাগুলোতে এ দুই পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনকে পাল্টাপাল্টি আসামিও করা হয়েছে। সে মামলাগুলো আদালতে চলমান।
এ সময় মুজিবুর মাদবরের স্ত্রী আমিরজান বলেন, মরদেহ ঝুলতে দেখে বাড়ির অন্যদের ডেকে আনি। তখন আমার স্বামীর চাচাতো ভাই সেকান্দার মাদবরের ছেলে সুমন মাদবর আমাকে মেহগুনি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। তাদের সঙ্গে এলাকার দলাদলি ও আর জমাজমি নিয়ে মামলা রয়েছে। তাই তারা আমার স্বামীকে মেরেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে মৃত মুজিবর মাদবরের চাচাতো সেকান্দার মাদবরের ছেলে সুমন মাদবর বলেন, মাঝে মাঝেই মুজিবুরের সঙ্গে তার পরিবারের লোকজন ঝগড়া করতেন। এমনকি তাকে ঠিকমতো খেতেও দিতেন না। গতকাল রাতেও মুজিবুর মাদবর তার স্ত্রী আমিরজান ও মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন। সকালে এমন ঘটনা ঘটার পরে আমিরজান বেগম স্বাভাবিক ছিলেন। ঘটনার পরে তার নাতিসহ অন্যরা পালিয়ে চলে যায়। এ সময় আমিরজান চলে যেতে চাইলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি আপনার স্বামী মারা গেছেন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? এরপর সে চলে যেতে চাইলে আমি তার হাতে ধরে আটকে রেখেছি। তাকে আমি বেঁধে রাখিনি। আমাদের সঙ্গে পূর্ব থেকে তাদের সঙ্গে জমাজমি ও নানা বিষয় নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। মূলত তারা নিজেরাই মুজিবুরকে হত্যা করেছেন। আর এখন আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এখন প্রশাসনের কাছে দাবি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক কারণ বের করুক। যেন নির্দোষ কেউ শাস্তি না পায়।
মন্তব্য করুন