কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার চর নেওয়াজি বিএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরিক্ষায় পা দিয়ে লিখেই বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ- ৪.৫০ পেয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহজাহান। অভাব, দারিদ্র্যতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিহত করে এবং দৃঢ় মনোবল ও ইচ্ছাশক্তিকে বুকে ধারণ করে শাহজাহান স্বপ্ন দেখে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের দরিদ্র কাঠমিস্ত্রী মো. ফরিদুল হক ও রাশেদা বেগম দম্পত্তির ঘরে জন্ম হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. শাহজাহান শেখের। ছয় ভাইয়ের মধ্যে শাহজাহান তৃতীয়। জন্মের পর শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহজাহানকে নিয়ে পরিবারে চিন্তার অন্ত ছিল না। দুটি হাত থাকলেও সেই হাতে ছিল না কোনো শক্তি। তবে ছোট থেকেই শাহজাহানের খেলাধুলা ও পড়ালেখার প্রতি ছিল খুব আগ্রহ।
বড় ভাই মুদি দোকানদার আশরাফের সহযোগিতায় পড়ালেখার সুযোগ হয় শাহজাহানের। অনেক দুর্গম পথ অতিক্রম করে প্রাইমারির গণ্ডি পেড়িয়ে শাহজাহান ভর্তি হয় দুই কিলোমিটার দূরের স্কুল চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে। এত দূরের স্কুলে তার পক্ষে একা চলাচল করা সম্ভব ছিল না। তার বড় ভাই আশরাফ প্রতিদিন স্কুলে রেখে আসত এবং ছুটি হলে নিয়ে আসত।
শাহজাহানের বাবা মো. ফরিদুল হক বলেন, আমাদের অভাবের সংসারে ছেলেদের পড়ালেখা করানোর কথা চিন্তাই করতে পারিনি। তার ওপর শাহজাহান ছিল জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর ইচ্ছা আর ওর বড় ভাইদের প্রচেষ্টায় পড়ালেখা করানো সম্ভব হয়েছে। ওর স্যাররাও অনেক সহযোগিতা করেছে।
শাহজাহানের মা রাশেদা বেগম বলেন, আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটা ছোট থেকে অনেক কষ্টে পড়ালেখা করে ভালো রেজাল্ট করেছে। ওর বাবা কাঠ মিস্তিরির কাজ করে ওকে কীভাবে পড়ালেখা করাবে তা নিয়েই চিন্তা করেছি। এ চিন্তা শাহজাহানের মাঝেও পরিলক্ষিত হচ্ছিল।
বড় হয়ে কী হতে চায় এ প্রশ্ন করলে শাহজাহান কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উত্তর দেয়, আমি প্রতিবন্ধী। বাইরে পড়ালেখা করার সামর্থ আমার নাই। দেখি কতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারি।
চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল আলম বলেন, দুই তিন বছর আগেও এ স্কুলে প্রতিবন্ধীদের পড়ালেখার কোনো পরিবেশ ছিল না। সেই সময়ে শাহজাহান অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। তার ভাই প্রতিদিন বাইকে করে রেখে যেত আবার স্কুল ছুটি হলে নিয়ে যেত। ছেলেটা অনেক মেধাবী। স্কুল থেকে আমরা সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। পরিবার থেকে আরেকটু সুযোগ পেলে ছেলেটা হয়তো এ প্লাস পেত।
মন্তব্য করুন