মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইন ঘেঁষে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে লিলন মিয়া (২৩) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ মে) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ নিহতের মরদেহ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাধবকুণ্ড পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন রুকনপুর (বড়খলা) গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক কাতার প্রবাসী রাসেদ আহমদের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত লিলন মিয়া উপজেলার দোহালিয়া গ্রামের আব্দুল মিয়ার ছেলে। রাতেই হাসপাতাল থেকে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়।
জানা গেছে, কাতার প্রবাসী রাসেদ আহমদ পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইন ঘেঁষে দোতলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে ঠিকাদার আব্দুল করিম ৩ থেকে ৪ জন রাজমিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে কাজ করছিলেন। ভবনের ছাদের একপাশের উপর দিয়ে গেছে পল্লী বিদ্যুতের এস. টি লাইন। বিকেলের দিকে নির্মাণ শ্রমিক লিলন মিয়া বিদ্যুৎ সঞ্চালিত ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের পাশে কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দোতলার উপর থেকে পড়ে যান। গুরুতর আহতাবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।
প্রবাসীর স্ত্রী ইপা বেগম জানান, ভবনের ফাউন্ডেশন কাজের সময় ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি সরানোর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে দরখাস্ত করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ১৭২৫ টাকা আবেদন ফি জমা দেন। এরপর অনেক দৌড়ঝাঁপ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলেনি। ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার আব্দুল করিমকে ঝুঁকিপূর্ণ সাইটে কাজ না করতে বলি। কিন্তু তিনি বাধা-নিষেধ না মেনেই একজন মিস্ত্রিকে দিয়ে ওই পাশে কাজ করালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, বড়লেখার বিভিন্ন এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হাইভোল্টেজ লাইন রয়েছে। অনেকের বসতঘরের টিনের চালের উপর, ঘরের দেওয়াল এমনকি হাতে ছোঁয়া দূরত্বে বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। গত ২৫ মার্চ জুড়ীতে টিনের চালে বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে পড়ে বিদ্যুতায়িত ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এসব মরণফাঁদ বিদ্যুৎ লাইন নিরাপদ করতে কার্যকর উদ্যোগই নেয়নি।
বড়লেখা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম (কম) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, ওই প্রবাসীর বাড়ি তৈরির আগেই এই স্থান দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানানো ছিল। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অবহিত না করেই তিনি ভবন নির্মাণ করেন। লাইন স্থানান্তরের আবেদন করেই তিনি লাইন ঘেঁষা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নির্মাণ কাজ করতে থাকেন। প্রায় ঘরের মধ্যেই বিদ্যুৎ লাইন ঢুকিয়ে ফেলেন। লাইন স্থানান্তর করার আগে কোনো ধরনের কাজ করতে বাধা দিলেও গ্রাহক তা মানেননি। বড়লেখায় বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ লাইন শনাক্ত করে তা নিরাপদ করার কাজ চলমান রয়েছে।
থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। শুক্রবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য ওই শ্রমিকের মরদেহ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন