ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শনিবার (২৫ মে) সকাল থেকেই দমকা হাওয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগরের তীরবর্তী এ জেলার নদীগুলো। স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামসহ ফেরিঘাটগুলো প্লাবিত হয়ে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পরেছে। তবে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক মুহা. রফিকুল ইসলাম।
রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ হালকা দমকা হাওয়া থাকালেও দুপুরের পর থেকে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এতে অনেক এলাকায় গাছ উপড়ে পরেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জেলার পায়রা ও বিষখালী নদীসহ অন্যান্য উপ-নদীগুলোতে দুপুরের জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেলার বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলেও ভাটায় পানি কিছুটা নেমে এসেছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৭ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপরে পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানির লেভেল ছিল ২ দশমিক ৬৪।
বরগুনা সদর উপজেলার ৯নং এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের লতাকাটা খেয়াঘাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট পায়রা নদী ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের ওপর। উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে লতাকাটা খেয়াঘাটের পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ও গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সদর উপজেলার ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫-৩০ হাজার মানুষ ও তাদের গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিদেরও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে, এমনকি বল প্রয়োগ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। খাবার, ওষুধ মজুদসহ আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। বাকিদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মুহা. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় জেলায় মোট ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এরইমধ্যে লোকজন তাদের গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া ও কিছু কিছু জায়গায় গাছ উপড়ে পরা ছাড়া কোনো ক্ষতির খবর এখনো আমাদের কাছে নেই। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মন্তব্য করুন