ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেটে দুদিনের টানা বৃষ্টি ও নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। সিলেটের প্রধান নদী সুরমার পানি একটি পয়েন্টে মাত্র ২১ ঘণ্টায় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এ অবস্থায় সিলেট বিভাগে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎহীন থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। আর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে ৪.৫৯ সেন্টিমিটার উপরে। পরবর্তী মাত্র ২১ ঘণ্টায় সেই উচ্চতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৬৬ সেন্টিমিটারে, যা ডেঞ্জার লেভেলের কাছাকাছি। সুরমার ওই পয়েন্টে স্বাভাবিকের থেকে ১২.৭৫ সেন্টিমিটার উচ্চতাকে ডেঞ্জার লেভেল ধরা হয়। সুরমা ছাড়াও সিলেটের কুশিয়ারা, লোভা, সারীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত কোনো নদীর কোনো পয়েন্টে পানি ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রম না করলেও সিলেটে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৪৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল ৬ থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এ ছাড়া সিলেটের উজান ভারতের চেরাপুঞ্জিতে একদিনে ১ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ অঞ্চলের ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি।
এদিকে, গত দুদিনের টানা বর্ষণ ও উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুরে উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি, বাইরাখেল, ময়নাহাটি, বন্দরহাটি, মেঘলি, তিলকৈপাড়া, ডিবিরহাওর, ফুলবাড়ি, টিপরাখরা, খলারবন্দ, মাঝেরবিল, হর্নি, নয়াবাড়ি, কালিঞ্জিাদবাড়ি, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে লামনিগ্রাম, মোয়াখাই, বিরাইমারা, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, লক্ষ্মীপুর, কেন্দ্রী, খারুবিল, নলজুরি, শেওলারটুক, বাওনহাওর, চারিকাটা ইউনিয়নের লাল, থুবাং, উত্তর বাউরভাগসহ বিভিন্ন গ্রমে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার সবচাইতে বড় নদী সারী, বড়গাং, নয়াগাং ও রাংপানি নদীর বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া কালবেলাকে বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের খোঁজখবর রাখা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
অপরদিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল ও হাওরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। পিয়াইন, সারী ও গোয়াইন নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।
উপজেলার ১৩নং বিছনাকান্দি ইউনিয়নের ঝারিখাল কান্দি, দমদমা, পাতনিকোনা, বগাইয়া হাওর, হাদারবিল গ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে নিচু এলাকার কিছু রাস্তা, মাঠঘাট ও গোচারণভূমি তলিয়ে গেছে। তবে উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের হাওরাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী মো. তৌহিদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ- নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে গোয়াইনঘাটে ৫০ টন জিআর খাদ্যশস্য (চাল) ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন