হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত মনমোহন সূত্রধরের স্ত্রী শোভা রাণী সূত্রধর (৫৭)। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে, পুত্রবধূ আর তাদের সন্তানদের নিয়ে স্বামীর ভিটেতেই বসবাস তার।
বিগত কয়েক বছর ধরে বাড়ির পেছন দিকে বয়ে চলাকালনী নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। আর সেই ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদরপুর, মনিরামপুর ও সৌলরি গ্রামের অন্তত কয়েক শতাধিক পরিবার হারিয়েছেন তাদের ভিটেমাটি। শোভা রাণীর পরিবারও পড়েছেন সেই নদী ভাঙনের কবলে।
ইতোমধ্যে শোভা রাণীর ভিটার এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি নদীর পানি বেড়ে যাওয়া ও বৃষ্টিতে অবশিষ্ট জায়গাটুকুতেও হানা দিয়েছে নদীভাঙন। মাথা গোঁজার সর্বশেষ ঠাঁইটুকু হারিয়ে গেলে কোথায় যাবেন সেই চিন্তায় এখন নদীর পাড়ের ছোট্ট ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে শোভা রাণীর।
শুধু শোভা রাণীই নন, কালনী নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় এখন এমন নির্ঘুম রাত কাটে বদরপুর, মনিপুর ও সৌলরির অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিগত বছর দেড়েক আগে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তবে সেগুলো ভাঙনের মূল জায়গায় না ফেলে দূরবর্তী স্থানে ফেলায় নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে ভাঙন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বিষয়টি সরেজমিনে দেখে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভাঙনের বিষয়টি অবগত রয়েছেন তারা। সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদরপুর, মনিপুর ও সৌলরি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নদীতে বেড়েছে পানি সেই পানির সঙ্গে বেড়েছে নদীর স্রোতধারা। নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রামগুলোর বাড়ি, গাছপালা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
শোভা রাণী সূত্রধর জানান, বিগত সাত বছরের বেশি সময় ধরে নদীভাঙনে নিজের স্বামীর ভিটার অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু জায়গা আছে তাতে ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বাস করছি। কিন্তু আবার শুরু হয়েছে নদীভাঙন। এই জায়গাটুকু নদীতে বিলীন হয়ে গেলে কোথায় যাবো ঈশ্বর ছাড়া কেউ জানে না।
একই গ্রামের বাসিন্দা রবিন্দ্র সূত্রধর জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙনে এই ৩টি গ্রামের তিনশোর বেশি পরিবার তাদের ভিটে মাটি হারিয়েছে। এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীভাঙন আবার শুরু হয়েছে। শেষে কোথায় দাঁড়াতে হবে আমাদের জানি না।
সৌলরী ও মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা মুজিবর মিয়া, সামরিক মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- বছর খানেক পূর্বে কিছু বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয়েছে এখানে। কিন্তু ভাঙনের শুরু যেদিক সেইদিকে না ফেলে শেষ প্রান্তে ফেলায় ভাঙন কোনোভাবেই থামছে না।
কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজবাহ উদ্দীন ভুঁইয়া জানান, দুই দিন পূর্বে ইউএনও মহোদয়সহ আমরা গ্রামগুলো দেখে এসেছি। ইউএনও সাহেব বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে আমি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। শিগগিরই ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন