বরগুনার তালতলীতে ১৬ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে একাই ৫ সন্তানকে বড় করেছেন ছালেয়া বেগম (৮৭)। সন্তানরা এখন স্বাবলম্বী। থাকেন পাকা বাড়িতে। যেখানে ঠাঁই হলো না মায়ের। অসুস্থতার দোহাই দিয়ে মাকে রেখেছেন ঝুপড়িঘরে।
জানা গেছে, ছালেয়া বেগম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মজিদ গাজীর স্ত্রী। ২ ছেলে ৩ মেয়ের জননী তিনি। স্বামীকে হারিয়ে এক সময় দুঃসহ দিন পার করে সন্তানদের বড় করেছেন ছালেয়া। আশা ছিল, শেষ বয়সে তাদের নিয়েই সুখের মুখ দেখবেন। কিন্তু সন্তানেরা বড় হয়ে নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর মায়ের ঠাঁই হয় ভিটের একটি ঝুপড়িঘরে।
সরজমিনে গিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছেলেরা ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেওয়ায় এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তার।
স্থানীয়রা জানায়, স্বামী মারা যাওয়ার পরে সন্তানদের নিয়ে খুবই খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছেন ছালেয়া বেগম। কিন্তু শেষ বয়সে এসে সন্তানরা তার ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তাই তাকে থাকতে হচ্ছে ঝুপড়িঘরে। আর এ কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
ছালেয়া বেগমের ছোট ছেলে কালাম গাজী জানান, আমার মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি ১০ মিনিট পরপর টয়লেট করে দেন। এমন পরিস্থিতিতে তাকে ঝুপড়িঘরে রাখা হয়েছে।
ছালেয়া বেগম বড় ছেলে আবদুর রব গাজী বলেন, মার নামে এক একর জমি ছিল। সেই জমি ছোট ভাই দখল করে নেয়। যেহেতু সম্পত্তি ছোট ভাই নিয়েছে তাই মাকে সে দেখাশোনা করুক।
এদিকে ছেলেদের দালান ঘরে মায়ের ঠাঁই না হওয়ায় বিষয়টা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের দাবি, ছেলেরা যেন বৃদ্ধ মাকে ভরণপোষণ দেয় ও সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতা যেন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলমগীর মিয়া বলেন, ওই বৃদ্ধা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। ছেলেদের আচরণ ঠিক হচ্ছে না। আমি ছেলেদের সঙ্গে কথা বলব।
ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে আমি জানতাম না। বিষয়টা খুবই অমানবিক। আমি বিষয়টা দেখব।
তালতলী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ওই বৃদ্ধার পক্ষ্য থেকে কেউ অভিযোগ দিলে ছেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ছালেয়া বেগমের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ারা তুম্পা বলেন, বিষয়টা খুবই অমানবিক। তবে খোঁজখবর নিয়ে তার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে তার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন