পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের পাইকারি বাজারে বেড়েছে সুপারির দাম। এক মাসের ব্যবধানে আকার ও জাতভেদে প্রতি পন সুপারিতে দাম বেড়েছে ১০০-২৫০ টাকা। বাজারে চাহিদার বিপরীতে যোগান কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে উপজেলার দেবীগঞ্জ বাজারের সুপারির হাট ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির গাছ কিংবা বাগানের সুপারি বিক্রি করতে আনা চাষিরা অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত দামে সুপারি বিক্রি করার জন্য। পাইকাররা এসব সুপারি কিনে ছোট, বড় আলাদা আলাদা করে স্তুপ করে রেখেছেন।
সুপারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলে সুপারি বিক্রি হয় পন ও কাহন এককে। প্রতি পনে ৮০টি সুপারি থাকে এবং ১৬ পন সুপারিতে এক কাহন হয়। মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় চাহিদার তুলনায় বাজারে জোগান কম সুপারির।
এক মাসের ব্যবধানে আকার ও জাতভেদে সুপারির দাম বেড়েছে ১০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ছোট সাইজের এক পন সুপারি ১৫০-১৯০ টাকায়, মাঝারি সাইজের সুপারি ২৩০-২৭০ টাকা এবং বড় সাইজের সুপারি ৩০০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাকারিয়া ইসলাম নামে এক সুপারি ব্যবসায়ী বলেন, দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপারি পাঠাই। প্রতি হাটে ২০০-২৫০ পন পর্যন্ত সুপারি কিনি। তবে ইদানিং সুপারির জোগান কম, দাই দাম এখন বেশি।
হাসানুল ইসলাম নামে আরেক সুপারি ব্যবসায়ী বলেন, একমাস আগেও সুপারির দাম কম ছিল। ছোট সাইজের সুপারি ১০০-১৩০ টাকায় এবং বড় সুপারি ২০০-২৬০ টাকায় কিনেছি। বর্তমানে সুপারির দাম বেশি, এখন ছোট সুপারি কিনতেছি ১৮০-২০০ টাকা এবং বড় সাইজের সুপারি ৩৬০-৩৮০ টাকায়।
এদিকে পুরো মৌসুম জুড়ে সুপারির দাম কম থাকায় শেষ সময় দাম বাড়লেও আশানুরূপ লাভ করতে পারছেন না সাধারণ চাষিরা।
টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের রামগঞ্জ বিলাসী থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা ওসমান আলী নামে এক চাষী বলেন, বাড়ির সঙ্গেই ৩৫-৪০টা সুপারির গাছ আছে। প্রতি বছর ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেও এবার শুরু থেকেই দাম না পাওয়ায় লাভ হয়নি। এখন শেষ সময় দাম বেড়েছে কিন্তু গাছে তো আর ফল নেই।
সদর ইউনিয়নের পূর্ব দেবীডুবা এলাকার প্রাণ কৃষ্ণ নামে আরেক চাষি বলেন, আমার ছোট্ট একটা সুপারির বাগান আছে। প্রতি বছর সুপারি বিক্রি করে যে টাকা পাই সেটা বাড়ির কোনো না কোনো কাজে লাগানো যেত। এবার শুরু থেকেই দাম কম ছিল, তাই শেষ সময়ে দাম বাড়লেও আমাদের খুব একটা লাভ হবে না।
দেবীগঞ্জ বাজারের সুপারির হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সামসুল আলম বলেন, প্রতি সপ্তাহের শনিবার এবং মঙ্গলবার বসে সুপারির হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে সুপারি বিক্রি করতে। প্রতি হাটে ৫০০-৭০০ পন পর্যন্ত সুপারি বেচাকেনা হয়।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নাঈম মোর্শেদ বলেন, ‘দেবীগঞ্জ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। এখানে বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষ করা না হলেও গ্রাম এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশি সুপারির গাছ এবং ছোট বাগান রয়েছে। এসব গাছ ও বাগানে উৎপাদিত সুপারি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন