শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাতক্ষীরা উপকূলে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ধস, আতংকে এলাকাবাসী

সাতক্ষীরা উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ধস। ছবি : কালবেলা
সাতক্ষীরা উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ধস। ছবি : কালবেলা

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন ১৫ নম্বর পোল্ডারে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ধস দেখা দিয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত শনিবার সোরা গ্রামের মালিবাড়ি সংলগ্ন অংশের বেড়িবাঁধে হঠাৎ ধস দেখা দেয়।

সোমবার (২৪ জুন) সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। ফলে টানা তিন দিনে প্রায় দুইশ ফুট এলাকাজুড়ে বাঁধের অংশ বিশেষ খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত মেরামত না হলে ১২ থেকে ১৪টি গ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় গোটা এলাকাজুড়ে ভাঙন আতংকে রয়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় এক হাজার বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু ইউনিয়নের সোরা গ্রামের মালিবাড়ি সংলগ্ন এলাকার বেড়িবাঁধ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও সেখানে অদ্যাবধি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি। বরং ‘জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ’ নামে বারবার জোড়াতালি দেওয়ায় প্রায়ই ওই এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দনসহ হরিশখালী এলাকায় টেকসই উপকূল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হলে যেভাবে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে তাতে খুব শিগগিরই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে ধস নামায় সোরা এলাকার মালিবাড়ি ও গাজিবাড়ী অংশে ১২ থেকে ১৪ ফুট চওড়া উপকূল রক্ষা বাঁধের মাত্র আড়াই থেকে তিন ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। প্রায় দুইশ ফুট এলাকাজুড়ে ধসের সৃষ্টি হওয়া ওই অংশের কোনো কোনো স্থানে আবার মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত বাঁধ অবশিষ্ট রয়েছে। ভাঙনের বিস্তৃতি রোধে একদিন আগে পাউবো’র পক্ষ থেকে ডাম্পিংকৃত জিও ব্যাগগুলো ধসে যাওয়া অংশের পানিতে তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ জনবল বাড়িয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা অব্যাহত রেখেছে।

ভাঙনকবলিত এলাকায় বসবাসরত মিলন হোসেন জানান, প্রায় দু’বছর আগে থেকে গাবুরায় এক হাজার বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। অথচ ঠিকাদার নিযুক্ত না হওয়ার অজুহাতে তাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি। এদিকে খোলপেটুয়া নদীর মধ্যভাগে বিশাল চর জেগে উঠায় স্রোত প্রতিনিয়ত তাদের বসতবাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধে আঘাত করছে। এমতাবস্থায় অব্যাহতভাবে তাদের এলাকার বাঁধ ভাঙলেও দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদী ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে তারা।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভাঙন দেখা দিয়েছিল। সে সময় পাউবো ওই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে সঠিক তদারকি না থাকায় কাজে বাঁধটি মেরামতে ব্যাপক অনিয়ম হয়। এ কারণে মাস না পেরোতেই বাঁধটি ভাঙনের শঙ্কার মুখে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুইদিন থেকে ভাঙনকবলিত স্থানে নদের পানি লেগে বাঁধের মাটি ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন বলেন, গত এক বছরে সংলগ্ন এলাকার বাঁধে চারবার ধসের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না নেওয়ায় পর্যায়ক্রমে খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন গোটা বাঁধকে প্রায় নদীতে মিশিয়ে দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে ৯ ও ১০নং সোরা এবং হরিশখালীসহ গাবুরার ১২ থেকে ১৪টি গ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হতে পারে।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ইউনিয়নের অপরাপর অংশে মেগা প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। অথচ হরিশখালী ও সোরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অংশে কাজ না হওয়ায় সেই এলাকা বারবার ভাঙছে। অব্যাহত ভাঙনের কারণে দৃষ্টিনন্দনের একমাত্র মিষ্টি পানির পুকুরসহ একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতংকে বসবাস করছে ওই এলাকার মানুষ। তিনি দ্রুত গাবুরা ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মেগা প্রকল্পের আওতায় এনে কাজ শুরু করার দাবি জানান।

বেড়িবাঁধের সংশ্লিষ্ট অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, গোটা গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬নং প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যবধি কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দন এলাকার ভাঙনের বিস্তৃতি ঠেকাতে পাঁচ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আওতায় অপরাপর প্রকল্প থেকে সংগৃহীত প্রায় সাড়ে সাতশ’ ব্যাগ ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত অংশে ডাম্পিং করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

১০

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১১

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১২

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১৩

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

১৪

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

১৫

জনপ্রশাসনের এপিডি এরফানুল হককে বদলি

১৬

কর্ণফুলীর তীরে নতুন আশা

১৭

চাকসু নির্বাচনে আরও তিন প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৮

সিলেট বিমানবন্দরে বিদ্যুৎস্পর্শে যুবকের মৃত্যু, থানায় মামলা

১৯

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

২০
X