বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, তার স্ত্রী তাহমিদা বেগম, ছেলে শেখ লাবিব হান্নানের নামে ৩৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (২৪ মে) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
এদিকে ফ্রিজ ৩৮টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে শেখ আব্দুল হান্নানের নামে ৫টি, ছেলের নামে একটি এবং ৩২টি ব্যাংক হিসাব স্ত্রীর নামে। এসব হিসাবে ১ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩২২ টাকা রয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
দুদকের পক্ষে সংস্থার উপপরিচালক তানজিব হাসিব সরকার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, শেখ আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন, ঘুষ গ্রহণ, নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে অর্থ পাচারসহ নিজ নামে এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, শেখ আব্দুল হান্নান তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার আগে এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরে তা উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পরবে। এ জন্য শেখ আব্দুল হান্নান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের এসব স্থাবর সম্পদ জরুরি ভিত্তিতে অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
এর আগে ৫ মে শেখ আব্দুল হান্নানের পরিবারের চার সদস্যের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। পরদিন তার জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট জব্দ এবং ছয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন একই আদালত।
এদিকে, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৭৮ কোটি টাকার মামলায় সিকদার গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী ও ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক মনোয়ারা সিকদারসহ এজাহারনামীয় ১৫ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার একই আদালত।
বাকিরা হলেন— ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান খান, চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল, পরিচালক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, পরিচালক তওসিফ সাইফুল্লাহ্, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ রইস উদ্দিন, দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাসান টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্রডওয়ে রিয়েলে এস্টেটের শেয়ার হোল্ডার আরিফ হাসান, ন্যাশনাল ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি ও সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল, একই ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ (সি এম আহমেদ), সাবেক পরিচালক পারভীন হক সিকদার, পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক পরিচালক খলিলুর রহমান, সাবেক পরিচালক মাবরুর হোসেন ও সাবেক সাব রেজিস্টার মো. রজব আলী।
দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক জিএম আহসানুল কবীর নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা হতে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত ৪৯০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৪৬২ কোটি টাকা নগদে উত্তোলনের ব্যবস্থা করে ঋণের উদ্দেশ্য বহির্ভূত খাতে স্থানান্তর, রুপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ঋণের আসল ৪৯০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ প্রাপ্য ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধন করার অপরাধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের কতিপয় কর্মচারীর নামে ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি কাগুজে ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত করেন। এ কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে ১৬ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।
প্রকল্পের জমি কোম্পানির নিজস্ব জমি না হওয়া সত্ত্বেও নিজস্ব জমি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে একই ব্যাংকের শাখা থেকে হাসান টেলিকম লিমিটেডের নামে গৃহীত ঋণের মর্টগেজ করা সম্পত্তির তথ্য গোপন করে তা মর্টগেজ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকের নির্বাহী ও কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধভাবে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও তা উত্তোলন করে ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ঋণের আসল ৪৯০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেন। এতে তারা দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব অপরাধে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন