নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন এক নারী। আবার সেই মামলায় জামিন দেওয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ তুলেছেন বাদী। বিষয়টি ঢাকার আদালতেপাড়ায় গত কয়েকদিন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ মামলাটি বিচারাধীন। গত ১৪ জুলাই এই মামলার আসামি মাহমুদুল হাসান সোহাগ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বাদীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে বিচারক মো. আব্দুল মোক্তাদির আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাদী। তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ দেন। প্রভাবিত হয়ে জামিন দেওয়া, শুনানির সময় বাদীকে অপমানজনক কথা বলা এসব অভিযোগ করেন। কিন্তু ঢাকার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলেন, মামলা অত্যন্ত দুর্বল। এমন মামলায় আসামির জামিন পাওয়া তার আইনগত অধিকার। প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ বাদী উত্থাপন করলেও সেটা যুক্তিসংগত নয়।
ট্রাইব্যুনালে বিচারের দিন ওই মামলার নথি থেকে দেখা যায়, ঢাকার দোহারের বাসিন্দা যিনি বর্তমানে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন, তিনি গত বছর ১ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের অভিযোগে মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাদীকে আসামি মাহমুদুল হাসান মিথ্যা প্রেম ও বিয়ের ঘটনা সাজিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় বিভিন্ন হোটেল রিসোর্টে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়, একই বাদী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন ২০২৪ সালে। ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট তারা ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সম্পাদনের মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছেন। একজন কাজি দ্বারা ইসলামী শরিয়ত মতে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এরপর তারা একত্রে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছেন। সিএমএম আদালতে করা মামলায় বাদীকে মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ধর্ষণ মামলার নথি থেকে আরও দেখা যায়, মামলাটি ট্রাইব্যুনালে দায়ের করার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হয়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর বাদী নারাজি আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল পুনরায় সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সিআইডি তদন্ত করে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সিআইডির প্রতিবেদনেও দেখা যায়, বাদী ও আসামি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করেছেন।
কিন্তু আসামি বিয়ে অস্বীকার করার কারণে সিআইডি বাদী ও আসামির মধ্যে যৌন সম্পর্ক হওয়ায় সেটাকে ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে সিআইডির প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা যায়, বাদীর ধর্ষণের অভিযোগ সংক্রান্তে কোনো চিকিৎসা সনদ সংগ্রহ করা হয়নি। এমনকি উভয়ের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা জামিনের আপত্তি করেছি। বাদী পক্ষের আইনজীবীসহ বাদী উপস্থিত ছিলেন। তারাও আপত্তি করেছেন। বাদী মামলায় যেখানে আসামিকে স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেখানে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয় না। ধর্ষণ হয়েছে এ ধরনের চিকিৎসকের কোনো চিকিৎসাপত্র নেই। এ ছাড়া আসামি বাদীর সঙ্গে আপস করবেন বলেও শুনানির সময় জানান। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।’
পিপি আরও বলেন, আসামিকে কারাগারে পাঠাতে না পেরে বাদী এখন ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বিভিন্ন কথা ছড়াচ্ছেন। মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন