মাসুদ রানা
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
নাইকো দুর্নীতি

কানাডিয়ান দুই সাক্ষী জবানবন্দিতে খালেদা জিয়ার সম্পর্কে কিছু বলেননি

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে কানাডা অ্যান্ড রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সদস্য কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপ সাক্ষ্য দিয়েছেন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় জেলখানার অবস্থিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে তারা এ মামলার আসামি খালেদা জিয়া সম্পর্কে কোনো কিছু বলেননি। তবে নাইকো দুর্নীতির বিষয়ে তারা জবানবন্দি দেন।

এ বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, 'দুই সাক্ষী তাদের জবানবন্দিতে তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কথা বলেছেন। তারা যৌথভাবে দুর্নীতি করতে সহযোগিতা করেছেন। তবে সাক্ষীরা খালেদা জিয়া সম্পর্কে কিছু বলেনি।'

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, 'দুই কানাডিয়ান পুলিশ এ মামলার অভিযোগের বিষয়ে খালেদা জিয়ারে সম্পর্কে কিছু বলেনি। এ জন্য আমরা তাদের জেরা করিনি।'

জবানবন্দিতে লয়েড শোয়েপ বলেন, কানাডার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি নাইকোতে তৎকালীন সরকারের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করতে ইন্ধন জোগায়। আমরা এ দুর্নীতির বিষয়ে জানতে পারি গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে। নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার দায়ে নাইকো রিসোর্সেস কানাডায় দুর্নীতির দায়ে সাজপ্রাপ্তও হয়েছে।

জবানবন্দিতে কেভিন ডুগগান বলেন, ২০০৫ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী একেএম মোশারফ হোসেনকে নাইকো রিসোর্স লিমিটেড ঘুষ হিসেবে একটি গাড়ি দেয়। ওই সংবাদের ভিত্তিতে কানাডার আলবার্তার ক্যালগরির আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন ইউনিট তদন্ত শুরু করে।

বিষয়টি কানাডার আদালতে উত্থাপিত হলে ২০১১ সালে নাইকো রিসোর্স লিমিটেড দোষ স্বীকার করে। নাইকোকে ৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। কানাডার পুলিশের দুর্নীতি দমন ইউনিট তিন বছর তদন্ত করে জানতে পারে নাইকো রিসোর্সের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানি স্ট্রেটাস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মালিক কাসেম শরীফ ২ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার নেন। সেলিম ভূঁইয়ার নির্দেশে কাসেম শরীফ সেখান থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার ফজলে সিদ্দিক নামে একজনকে পাঠান। জামাল শামসি নামে একজনকে ৫৭ হাজার ইউএস ডলার পাঠান। পরে আরও এক লাখ ৩৩ হাজার ইউএস ডলার জামাল শামসিকে পাঠানো হয়। তারা সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা পাঠান। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও সেলিম ভূঁইয়া কাশেম শরীফের কোম্পানির পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তবে শর্ত থাকে কাসেম শরীফ গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের অনুমতি ছাড়া বা তার কথার বাইরে কারও সঙ্গে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারবেন না। তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এদিন খালেদার পক্ষে তার আইনজীবী হাজিরা দেন। অপর আসামিরা আদালতে উপস্থিতি হন। তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিচারক দুই সাক্ষী কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর শোয়েপের জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তবে অপর সাক্ষী কেবিন দুগ্গানের জেরা শেষ না হওয়ায় আগামীকাল মঙ্গলবার আদালত নতুন দিন ধার্য করেছেন। এ মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলমের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে৷

এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিদেশি সাক্ষী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) একজন এবং কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিন বিদেশি সাক্ষীকে দেশে আসার অনুমতি দেন আদালত। এরপর গত ১৯ অক্টোবর কানাডিয়ান দুই সাক্ষীকে আদালতে হাজিরে সমন দেন আদালত।

কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এরপর গত ১৯ মার্চ আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন।

মামলার অন্য সাত আসামি হলেন- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলার দায় হতে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছুটি শেষে রাকসুর প্রচার শুরু, রয়ে গেছে শঙ্কা

সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এলো ২৬৮ কোটি ডলার

অনেক উপদেষ্টা সেফ এক্সিটের কথা ভেবে রেখেছেন : নাহিদ

নতুন সংকট তৈরি হলে আরও একটা গণঅভ্যুত্থান হবে : মঞ্জু

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

তাহিরপুরে বালু মহালের জায়গা নির্ধারণ করে দিল প্রশাসন

সমালোচনায় আমার কিছু যায় আসে না : বাঁধন

চট্টগ্রামে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা, ক্যামেরা ভাঙচুর

সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত : আলী রীয়াজ

স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি শিক্ষকদের

১০

পে-কমিশনের সভায় দাবি উত্থাপিত না হওয়ায় বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের ক্ষোভ

১১

জাল টাকায় ফোন কিনে যুবকের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

১২

কোরআন অবমাননা ইস্যুতে হেফাজতের লংমার্চের হুঁশিয়ারি

১৩

দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন হলো টেকনোর পোভা ফাইভজি সিরিজ

১৪

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস এক্সপোর প্রতিনিধিত্ব করছেন ড. সবুর খান

১৫

কোরআন অবমাননা, যা বলছেন আজহারি

১৬

তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবিতে পদযাত্রা

১৭

ধানমন্ডিতে দরজা ভেঙে মিলল বিএনপি নেতার মরদেহ

১৮

যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের দাবি ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরামের

১৯

৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি

২০
X