মাদক মামলায় আয়নাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা নাজমুলসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল কামালের আদালত এই আদেশ দেন। রায়ে আদালত বার কাউন্সিল, পুলিশপ্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলখানার জন্য ভিন্ন ভিন্ন আরও কয়েকটি নির্দেশনা দেন।
এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক কালবেলায় ‘মাদক মামলায় যুবলীগ নেতার আয়নাবাজি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ওইদিনই এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতে আবেদন জানান। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের আদালতে শুনানি হয়। একাধিকবার শুনানি শেষে গত সোমবার বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল কামালের আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়।
রায়ে আদালত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নাজমুল, মিরাজুল ও ফরিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪১৯ ও ১০৯ ধারায় শাহবাগ থানায় এজাহার দায়ের করার জন্য হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও আদালত মামলাটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআই প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছন।
আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেছেন, তদন্তকালীন ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত এমনকি আইনজীবী হলেও তাদের সবাইকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়াও মামলার সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন মিডিয়ার রিপোর্ট ও এফিডেভিটে তদন্ত করাকালীন তদন্ত কর্মকর্তা উক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে তদন্ত করতে হবে।
আদালত অপর এক আদেশে বলেছেন, কোনো মামলায় আসামি আত্মসমর্পণের সময় বিচারকদের আসামির পরিচয় শনাক্ত করার জন্য তার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ বা পাসপোর্টের কপি দাখিলের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। আদালত পুলিশের ওপর নির্দেশনায় বলেছেন, যখন কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার বা আদলাতে সোপর্দ করবে তখন তাদের পরিচয় জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপিকে একটি সার্কুলার ইস্যু করে সমস্ত পুলিশ অফিসারদের অবহিত করার নির্দেশ দেন আদালত।
আইনজীবীদের উদ্দেশে নির্দেশনায় আদালত বলেছেন, কোনো আসামিকে আত্মসমর্পণ করানোর সময় পিটিশনে তিনি কীভাবে আসামি শনাক্ত করেছেন তার একটি বর্ণনা থাকতে হবে। এ ব্যাপারে বার কাউন্সিলকে সকল আইনজীবীদের অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া নির্দেশনায় আদালত বলেছেন, জেলখানায় যখন কোনো আসামি গ্রহণ করা হবে তখন তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্ট দ্বারা শনাক্ত করতে হবে। তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে তা ভেরিফাই করতে হবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সকল জেল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেছেন, ঘটনাটি বিচার বিভাগের জন্য দুঃখজনক এবং এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে বিচার বিভাগ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরাং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে আইনের আওতায় আনা আবশ্যক। তিনি আদালতে দণ্ডবিধির ৪১৯ এবং ১০৯ ধারায় মামলা দায়েরের জন্য নির্দেশনা প্রার্থনা করেন।
মনজিল মোরশেদ আদালতে বলেন, এ ধরনের মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতা রোধ করার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা এবং আসামিদের প্রাথমিক স্তরে পরিচয় শনাক্ত করা আবশ্যক। ঘটনার সঙ্গে নাজমুল, মিরাজ ও ফরিদ শুধু যে তারাই জড়িত, এমনটা হয়তো নাও হতে পারে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কোনো লোক জড়িত থাকতে পারে। তাদেরও আইনের অওতায় আনা প্রয়োজন। এ কারণে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আবেদন জানান, যাতে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার নথিতে সংযুক্ত সকল কাগজপত্র বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্য, প্রধান আসামি নাজমুল আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
মন্তব্য করুন