বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করে রাজধানীর বংশালের আগা সাদেক রোডে হরিজন সম্প্রদায়ের বসতি উচ্ছেদ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ ১ মাসের স্ট্যাটাসকোর (যেমন আছে তেমন থাকার) আদেশ দেন। রুলে বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়েছেন। আদালতে হরিজনদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী তিন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মনজ কান্তি ভৌমিক ও আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস।
ব্রিটিশ আমলে ভারতের তেলেগু এলাকা থেকে আসা এই হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন কয়েক’শ বছর ধরে এই কলোনিতে বসবাস করে আসছেন। মিরনজিল্লার সুইপার কলোনিতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার বাস করেন।
সিটি করপোরেশন বলছে, এখানে বসবাসকরা পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে ৬৬ জনকে পুনর্বাসন করা হবে। কারণ এই ৬৬ জন বর্তমানে করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত। বাদ বাকি পরিবারগুলা উচ্ছেদ করে জমিতে বহুতল ভবন বাণিজ্যিক ও কাঁচাবাজার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যদিও এখানে বসবাস করা পরিবারের সদস্যরা কোনো না কোনো সময় সিটি করপোরেশনের কর্মী ছিল। তাদের অনেকেই ছাঁটাই হয়েছেন। কারও মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া এখানে বসবাসকরা সবার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এ কলোনি।
সেখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদে গত সোমবার গিয়েছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা হরিজন সম্প্রদায়ের তীব্র আপত্তি ও বাধার মুখে পড়েন। পরে তারা একটি দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে চলে যান। সিটি করপোরেশনের এই উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছে হরিজন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা। তারা স্কুলের পোশাক পরে বিক্ষোভে অংশ নেন।
উচ্ছেদ হলে কোথায় যাবেন এমন চিন্তা থেকে গাছে ঝুলে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে একজন। এতকিছুর পরও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কলোনি ছেড়ে যেতে নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ ছাড়া ৪০০ বছরের পুরোনো এই কলোনিতে কেটে দেওয়া হয়েছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
গত রোববার কলোনি খালি করে দিতে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। সোমবার চালানো হয় অভিযান। মঙ্গলবার দিনভর হাজারো মানুষর প্রতিবাদের মুখে প্রস্তুতি নিয়েও অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। সর্বশেষ জায়গা ছাড়তে সময় দেওয়া হয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। এই হিসেবে শুক্রবার রাত অথবা শনিবার আবারও কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান হতে পারে। এরই মধ্যে হাইকোর্ট উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর স্থিতিবস্তা জারি করেছেন।
মন্তব্য করুন