শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ সম্বোধন, প্রতিবাদে সমাবেশ

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদকারীরা। ছবি : কালবেলা
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদকারীরা। ছবি : কালবেলা

সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্র ‍নৃ-গোষ্ঠীদের ‘আদিবাসী’ বলে সম্বোধনের প্রতিবাদে ও আদিবাসী শব্দটি প্রত্যাহারের দাবিতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ (সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থী সমাজ) নামে একটি প্ল্যাটফর্ম।

প্ল্যাটফর্মটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুহম্মদ জিয়াউল হক সমাবেশে বলেন, আদিবাসী বলতে বুঝায় কোনো দেশ বা স্থানের আদিম অধিবাসী বা অতিপ্রাচীনকাল থেকে বসবাসরত জনগোষ্ঠীই ওই অঞ্চলের আদিবাসী। সেই অর্থে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে বসবাসরত বাঙালিরাই এ দেশের আদিবাসী। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন যে সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি আছে তাদের আদিনিবাস কারও বাংলাদেশ নয়, বরং ভারত, মায়ানমার বা তার আশপাশের এলাকাগুলো। যেমন- মারমা নৃগোষ্ঠীর আদিনিবাস মায়ানমার, লুসাই নৃগোষ্ঠীর আদিনিবাস ভারতের লুসাই পাহাড়, চাকমা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদিনিবাস ত্রিপুরার কাছাকাছি চম্পক নগর, ত্রিপুরা (তিপ্রা) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদিনিবাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, মণিপুরীদের আদিনিবাস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্য, ম্রো বা মুরং-দের আদিনিবাস মায়ানমারের আরাকান, রাখাইনদেরও আদিনিবাস মায়ানমার। অর্থাৎ এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আদিনিবাস বাংলাদেশ নয়, বরং ভারত বা মিয়ানমার। তাহলে কোন যুক্তিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বাংলাদেশের আদিবাসী বলা যেতে পারে?

তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই এটি মীমাংসিত যে, স্মরণাতীতকাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালিদের বসবাস স্থান ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন যেসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি আছে তাদের মধ্যে দুই রকম লোক রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ দখলদার বা সেটেলার, আবার কেউ অভিবাসী বা আশ্রয় গ্রহীতা। ১৭-১৮শ সাল থেকে পাশের রাষ্ট্র- মায়ানমার, ভারত ও তিব্বতসহ আশপাশের অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন দস্যু ও সন্ত্রাসী সম্প্রদায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে বাঙালিদের বাড়িঘর লুটপাট, হত্যাকাণ্ড এবং ব্যাপক দখলদারিত্ব চালায়। নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক বাঙালিদের বের করে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখলে নিয়ে নেয়। এরা হচ্ছে স্যাটেলার দখলদার। আপনারা দেখে থাকবেন যে, এদের দখলদারিত্ব, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীপনা কিন্তু এখনো বিদ্যমান। বিগত বছরগুলো থেকে এদের পেশাটাই এ রকম চলে এসেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে আরেকটা শ্রেণি আশপাশের অঞ্চলে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়ে আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এরা হচ্ছে অভিবাসী বা আশ্রয়গ্রহীতা। পরবর্তীতে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভূমিচ্যুত সামান্য কিছু বাঙালিকে ওখানে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দেন। এখনো লাখ লাখ ভূমিচ্যুত বাঙালি তাদের আদি নিবাস পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরতে পারছেন না নানা রকম বাধা-বিঘ্নতার কারণে। গত ২/৩শ’ বছরের ওইসব ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী, তাদের সঙ্গে কিছু অভিবাসীরাও এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র অর্থাৎ আদিবাসী দাবি করে বসছে। অনেকটা ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের মতো। ইতিহাসের জ্ঞান যাদের শূন্যের কোঠায় তাদের কেউ কেউ না বুঝেই সেসব পাশের রাষ্ট্র থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কিংবা উপজাতিদের আদিবাসী বলে সম্বোধন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, আদিবাসী শব্দটি শ্রুতিমধুর শোনালেও, আদিবাসী শব্দটি তীব্র বিষযুক্ত। কোনো জাতিকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে জাতিসংঘ চার্টার অনুযায়ী ঐ জাতি জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ বা স্বায়ত্তশাসন চাইতে পারে। গণভোট করে পৃথক রাষ্ট্রের দাবি তুলতে পারে। নৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী বললে, এ সুযোগ নিয়ে পার্বত্য জেলাগুলোকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে কথিত জুম্মল্যান্ড বা গ্রেটার কুকিচিনের অংশ বানানোর ষড়যন্ত্র জোরদার হতে পারে, পাহাড়ে শুরু হতে পারে ভয়াবহ বাঙালি গণহত্যা। ঠিক যে প্রক্রিয়ায় সুদান থেকে বিচ্ছিন্ন করে দক্ষিণ সুদান কিংবা ইন্দোনেশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব তিমুর তৈরি করা হয়েছিল, ঠিক একই প্রক্রিয়ায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর ভিত্তিতে ভাগ করতে চাইছেন না। কিন্তু এ ভাষণে তিনি আদিবাসী শব্দ উচ্চারণ করে জাতিকে আদিবাসী-অভিবাসী দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেললেন, এটা কেমন কথা ?

প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব বলেন, সবার আগে দেশ এবং আমাদের এই দেশ পরিচালিত হয় আমাদের সংবিধানের দ্বারা। দেশের সংবিধান যেখানে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে দেশে কোনো আদিবাসী নেই, কিন্তু আমরা দেখছি একটি মহল অতি উৎসাহী হয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমি মনে করি এর পিছনে গভীর একটি পরিকল্পনা রয়েছে, যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে দেশভাগের মতো ভয়ংকর ষড়যন্ত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সমাবেশে বক্তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে আদিবাসী শব্দের প্রত্যাহার চান এবং দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল পদ থেকে এমন ‘দায়িত্বহীন বক্তব্য’ পুনরায় ঘটবে না, এমন নিশ্চয়তা দাবি করেন। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধিরও দাবি জানান।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১০

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

১১

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

১২

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

১৩

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৪

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

১৫

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৬

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

১৭

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৮

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১৯

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

২০
X