ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিন চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, খাদিজাতুল কুবরাকে বিনা বিচারে ৩৬৫ দিন জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। খাদিজার আটকের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে সরকার। তারা নিজেদের কথাগুলো প্রকাশ করতে পাড়ছে না। এদিকে খাদিজার ওপর চলমান অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিমুখ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলে এটা রাষ্ট্রবিরোধী বিষয়, এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, খাদিজাকে যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দেওয়া হয়েছে, তা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারে না। খাদিজা যে প্রশ্নগুলো করেছিল সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সে প্রশ্নগুলো সব সাধারণ মানুষের মনের কথা। আমরা আজকে খাদিজার মুক্তি নিয়ে লড়াই করেছি, এটা শুধু খাদিজার মুক্তির জন্য নয়, এটা আমাদের সবার মুক্তির জন্য লড়াই।
মানববন্ধনে খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাকস্বাধীনতা বলে আমাদের যে একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, সেটার সুফল আমরা আজ কোথায় পাচ্ছি। আজ দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকত তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হতো না। আমরা যদি বাকস্বাধীনতার সুফল না পেয়ে থাকি, তাহলে সংবিধান থেকে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি তুলে দিতে পারেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, আমাদের বিশ্বিবদ্যালয়ে একটি অকার্যকর প্রশাসন আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়ার বডির কাছে আমরা গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, খাদিজাকে নিয়ে যারা কথা বলবে, তারাও রাষ্ট্রবিরোধিতার অপরাধে দোষী হবে। যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী জেলে থাকলেও নির্লিপ্ত অবস্থান গ্রহণ করে। এ ধরনের প্রশাসন আমাদের দরকার নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, খাদিজা কি চোর, ডাকাত। সে তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। শিক্ষক হিসেবে আপনাদের কি কোনো লজ্জা নেই। আপনাদের একজন শিক্ষার্থী এক বছর ধরে কারাগারে আছে। কিন্তু আপনারা তার জন্য কিছুই করছেন না। এর চেয়ে লজ্জার কিছু হতে পারে না।
মানববন্ধনে খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এক বছর হয়ে গেল খাদিজাকে আমি পাশে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। কোন অপরাধে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো। শুধু একটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করার জন্য এতদিন জেলে থাকতে হবে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আজ সবাই কিন্তু আছে আমার মেয়ে নেই। আমার মেয়েকে যেন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত। আমি আমার মেয়েকে চিকিৎসা করাতেও পারলাম না। খাদিজার চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার এমন কোনো দিন নেই, যেদিন চোখের পানি না ঝরে।
মানববন্ধনে খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, আমার বোন কী অপরাধ করেছে, আজকে এক বছর ধরে জেলে আছে। জেলে দেখা করতে গেলে জিজ্ঞেস করে, কেন আমি এতদিন কারাগারে। তখন আমাদের কাছে কোনো উত্তর থাকে না। আমার বোন কেন কারাগারে। সে কী এমন অপরাধ করেছে। এতদিন তাকে বিনা বিচারে আটক রাখতে হবে। আমার বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে আগামী নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। একটা শিক্ষার্থী এতদিন কারাগারে আছে, সে কতটা মানসিক বিপর্যস্ত ও ট্রমার মধ্যে আছে। আমি দাবি জানাই, অতি সত্বর তাকে জামিন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সুযোগ দিন।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা।
মন্তব্য করুন