শিক্ষার্থীরা আগ্রহ প্রকাশ করলে আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান ছাত্রদল নেতা মুমিনুল ইসলাম জিসান। জিসান ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুমিনুল ইসলাম জিসান বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি চান এবং তাদের আস্থার প্রতিফলন যদি আমার ওপর পড়ে, তাহলে আমি প্রস্তুত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি দীর্ঘ সময় এই ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমাকে ব্যক্তিগত ও একাডেমিকভাবে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে, ছিল গুম ও নির্যাতনের অভিজ্ঞতাও।
তিনি বলেন, এই বাস্তবতাগুলো আমাকে দুর্বল করেনি; বরং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। তবে আমি জানি, ডাকসু নির্বাচন বর্তমানে স্পর্শকাতর ইস্যু। একজন প্রার্থী হিসেবে আমার দীর্ঘ সেশনজট কিংবা অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন উঠতে পারে, এবং সেটি স্বাভাবিক। আমি বিশ্বাস করি, এটি ছাত্রসমাজ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপক্বতারই প্রতিচ্ছবি।
জিসান বলেন, আমার অবস্থান খুবই পরিষ্কার—যদি শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের স্বার্থরক্ষায় আমি কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দিতে পারি, তাহলে আমি প্রার্থী হবো। অন্যথায়, আমি সবসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারা দেশের ছাত্রদের দাবির পক্ষে থেকে কাজ করে যাব। ডাকসু নির্বাচন কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের এবং প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্র। সেই প্রক্রিয়ায় আমি অংশ নিতে আগ্রহী, তবে সেটি হবে ছাত্রসমাজের সম্মতির ভিত্তিতে, শুধু আমার ইচ্ছায় নয়।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট অপসারণে আমি রক্তের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। রাজপথ, জেল-জুলুম, গুম এমনকি অসংখ্যবার ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হয়েছি। মৃত ভেবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে ফেলে রেখে গেছে। কিন্তু কোনোদিন ভীত হয়ে অস্তিত্বের প্রশ্নে ছাড় দেইনি। মিথ্যা মামলায় বারবার কারাবরণ করেছি। শিক্ষাজীবন, ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট করে দিয়েছিল স্বৈরাচার সরকার। কিন্তু এর পরও আমি থামিনি। লড়াই করে গেছি একটি সুন্দর বাংলাদেশের জন্যে।
জাতীয়তাবাদের আদর্শ বাস্তবায়নে কখনো এক চুল পরিমাণও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। আমার প্রাণের ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি চান, তবে ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আর বিজয়ের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের বিনির্মাণের আঁতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবিকভাবে একটি বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিতে লড়াই জারি রাখব।
তিনি আরও বলেন, যদি শিক্ষার্থীরা আমাকে বিজয়ী করে, তবে সেই জয় আমি জুলাইয়ের বীর শহীদ ও আহতদের এবং বিগত দেড় দশক ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাওয়া বিএনপি ছাত্রদলের শহীদ, আহত এবং গুম হয়ে যাওয়া কর্মীদের জন্য উৎসর্গ করব।
মন্তব্য করুন