চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) ও ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে শাখা ছাত্রশিবির। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ইব্রাহিম হোসেন রনি, শাখা সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ, অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁঞা, শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফসহ অন্যান্য নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, মানবিক বিবেচনায় ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ একাডেমিক পরিসর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় এটি প্রমাণিত হবে, শুধু চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতেই তাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধিকাংশ সদস্য সরাসরি একটি বিশেষ দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এমন হলে তো সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ থাকতে পারে না। কমিশনে দায়িত্বে থাকা প্রফেসর ড. জাহিদুর রহমান চৌধুরী প্রকাশ্যে ছাত্রশিবিরসহ মতাদর্শ বিরোধী সবার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করেন। এমন একজন শিক্ষক কমিশনে থাকলে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রশাসন একটি বিশেষ সংগঠনকে সুবিধা দিতে ভোটার ও প্রার্থীদের বয়সসীমা তুলে নিয়েছে। নির্দিষ্ট দলের নেতাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের একপেশে পদক্ষেপের স্পষ্ট ব্যাখ্যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনকে দিতে হবে।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচার না করায় তারাও ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ করছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ছাত্রশিবিরের এ নেতা বলেন, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী ক্যাম্পাসের জন্য এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু হতে পারে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আল আমিন ন্যূনতম বিচার না করে জুলাইয়ের সঙ্গে বেইমানি করেছেন।
ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী বলেন, মানবিক বিবেচনায় ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া শিক্ষার্থীদের এ সুযোগ একাডেমিক পরিসর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। অন্যথায় এটি প্রমাণিত হবে যে, শুধুমাত্র চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতেই তাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেটি ছাত্রসমাজ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
শাখা ছাত্রশিবিরের লিখিত বক্তব্যে তারা আসন্ন চাকসু নির্বাচন ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু দাবি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দাবিগুলো হলো, ১. হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা, ২. ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়াই গঠনতন্ত্রে অপ্রয়োজনীয় পদ যুক্ত করা, ৩. ভোটার ও প্রার্থীদের বয়সসীমা তুলে নেওয়ার একপেশে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা প্রদান, ৪. ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৫. মানবিক কারণে ফিরিয়ে দেওয়া ছাত্রত্ব একাডেমিক পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখা, ৬. চাকসুতে সভাপতির সীমাহীন ক্ষমতা হ্রাস করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ৭. নির্বাচন কমিশনে পক্ষপাতদুষ্ট শিক্ষকদের অপসারণ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ৮. প্রশাসনের ভেতরের একটি পক্ষের প্রোপাগান্ডা ও দায় চাপানোর প্রবণতা বন্ধ করা।
মন্তব্য করুন