

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ব্রাকসু) আয়োজনের লক্ষ্যে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ কমিশন গঠন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস রহমান। এ ছাড়া সদস্যরা হলেন—ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হাসান আলী, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোছা. সিফাত রুমানা, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার সরকার।
প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। জুলাই আন্দোলনের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক দফা অবস্থান কর্মসূচি ও আমরণ অনশনের মুখে গত ২৮ অক্টোবর ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯’-এ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ আইনের অনুমোদন দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি।
এর আগে সোমবার (৩ নভেম্বর) ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী। এ সময় গঠনতন্ত্রে হল সংসদে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন না থাকাসহ বেশ কিছু বিষয় সামনে এনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানান শাখা ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী ও বাম সংগঠনের নেতারা।
তারা নির্বাচন আয়োজনের আগে গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে জানান ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সিন্ডিকেট সদস্যরা পরবর্তী সময় এসব সংশোধন করবেন।
মঙ্গলবার সকালে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সংবাদ সম্মেলন করে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তপশিল ঘোষণা করে আগামী এক মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহল নির্বাচন বানচালে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা গঠনতন্ত্রের কিছু অংশ সংশোধনের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত বা বানচালের চেষ্টা করছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, এ সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। আমরা আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের সকল কার্যক্রম শুরু হবে। নির্বাচনের সকল কিছু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের নেতা মো. ইয়ামিন বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে মাত্র ১৩টি পদ নিয়ে ছাত্র সংসদ চলতে পারে না। বেগম রোকেয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে একজন নারী এজিএসের পদও রাখা হয়নি। গোঁজামিল দিয়ে তড়িঘড়ি করে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করা গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক বলেন, বিদ্যমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। পাশাপাশি ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংশোধনীর প্রয়োজন হলে তা নির্বাচনের পর করতে সিন্ডিকেট নির্দেশ দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা সবার মতামত ও পরামর্শ নিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ব্রাকসুর গঠনতন্ত্রে যে ঘাটতিগুলো রয়েছে আজ আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন