

গাছের পাতা থেকে তৈরি হচ্ছে তেল। অবাক হওয়ার মতোই এ কাজটি করে দেখিয়েছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সন্তান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আরিফ। তাইওয়ানের একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে কয়েক বছর আগে পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের শ্রীকান্ত গ্রামে লিজ নেওয়া জমিতে শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ান ‘টি ট্রি’ গাছের চাষ।
এ বছর সেই গাছের পাতা থেকে বিশেষ মেশিনের সাহায্যে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ও হাইড্রোসল ওয়াটার উৎপাদন শুরু করেছেন তিনি। চলতি বছর তার প্রকল্প থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
জানা গেছে, শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিদেশ থেকে টি ট্রির চারা আনতে পারেননি। পরে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট থেকে অল্প কিছু বীজ সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের সহায়তায় তিন বছরের প্রচেষ্টায় ৪০টি চারা উৎপাদনে সফল হন তিনি। সেই চারাগুলোর কাটিং থেকে এখন তার এক একরের প্রকল্পে ২ হাজারের বেশি টি ট্রি গাছ রয়েছে।
গাছ বড় হওয়ার পর পাতা থেকে কীভাবে তেল উৎপাদন করবেন সেটা নিয়েও পড়েন বিপাকে। চীন থেকে ছোট একটি মেশিন এনে সেটি বিশ্লেষণ করে স্থানীয়ভাবে ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার মেশিন তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে সেই মেশিন দিয়ে সফলভাবে তেল ও হাইড্রোসল উৎপাদন করে তা দেশে ও বিদেশে বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন ১০/১২ জনের।
সরেজমিনে প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা তেল উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রথমে গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো ড্রামের পানিতে ধুয়ে স্টিলের চৌবাচ্চায় নিয়ে রাখেন। পরে সেই পাতাগুলো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা জাল দিয়ে স্টিম ডিস্টিলেশন পদ্ধতিতে বের করা হয় তেল ও হাইড্রোসল। প্রতি ব্যাচে ৫০ কেজি পাতা থেকে তিন ব্যাচে দিনে দেড় লিটার তেল উৎপাদন হয়।
প্রকল্প দেখতে আসা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, আমি জানতাম গাছের পাতা শুধু ঝরে যায়, তা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। কিন্তু গাছের পাতা থেকে যে তেল হয়, শুনে আমি অবাক হয়েছি। নিজেও সেই তেল ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছি। দেশে আরিফের মতো আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাক এ প্রত্যাশা করি।
তরুণ উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান আরিফ বলেন, টি ট্রি পাতার তেল ও হাইড্রোসল ওয়াটার বিশ্বব্যাপী স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে ব্যবহৃত হয়। দেশের বাইরে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। সরকার যদি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করেন, তাহলে এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়সহ অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারব।
পীরগাছা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকে আরিফকে সহযোগিতা করেছি। রংপুরের মাটি এ গাছের জন্য উপযোগী। আরিফের মতো কেউ যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাহলে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন