জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬ পিএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘আমার অনুগ্রহে চেয়ারে বসে এখন আমাকেই ভুলে গেছে জাবি উপাচার্য’

জাবির সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি। ছবি : কালবেলা
জাবির সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি। ছবি : কালবেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। যেখানে তার কারণেই অধ্যাপক মো. নূরুল আলম উপাচার্যের চেয়ারে বসেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সহকারী অধ্যাপক জনি।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি খাম সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে উপাচার্যকে গালাগাল করার অডিও ক্লিপ সংবলিত ডিভিডি, দায়মুক্তিপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ও একটি চিঠি পাওয়া যায়। খামের প্রেরকের পরিচয় না থাকলেও চিঠির নিচে লেখা হয়, ‘ধন্যবাদান্তে : প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্য।’

৫২ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে মাহমুদুর রহমান জনিকে বলতে শোনা যায়, ‘বাট ইউ ফরগেট, আই ওয়াজ ওয়ান্স আপন এ টাইম, আই ওয়াজ দ্য এক্স প্রেসিডেন্ট অফ বিএসএল-জেইউ। আমি হয়তো ধরা খাব, ধরা খাব না এমন বলছি না। কিন্তু ধরা খাওয়ার আগে আমি চার-পাঁচটা মুখ শেষ করে দিব। অ্যান্ড ভিসিকে আমি একজনকে দিয়ে রিচ করেছিলাম, ভিসি বলছে, আমি ওকে বহিষ্কার করে দিচ্ছি, সাসপেন্ড করে দিচ্ছি। ওকে আইনের আশ্রয় নিতে বলো।’

এ ছাড়া অডিও ক্লিপের ৩২ সেকেন্ডের পর মাহমুদুর রহমান জনি উপাচার্যকে নিয়ে লেখার অযোগ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। তিনি বলতে থাকেন, ‘যেহেতু আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে বলছে, আমাকে নাকি বহিষ্কার করে দিচ্ছে, ইউনিভার্সিটি থেকে। তাই আমাকে বলা হয়েছে আইনের আশ্রয় নিতে। উপাচার্য যে আমার জন্য চেয়ারে বসেছে, সেটা সে ভুলে গেছে।’ ৫২ সেকেন্ডের এ অডিও ক্লিপে শিক্ষক জনিকে মদ্যপ অবস্থায় কথা বলতে শোনা যায়।

জানা যায়, মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভনে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগের প্রভাষক আনিকা বুশরা বৈচির একটি অন্তরঙ্গ ছবি (সেলফি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়। তার প্রেক্ষিতে জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর একাধিক ছাত্রীর সাথে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন জনি।

এ ছাড়া জনির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরে জনির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তখন আগের কমিটির রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ হয়নি মর্মে গত ১৩ মার্চ পুনরায় স্পষ্টীকরণ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় জনির বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল ও মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উপাচার্য বরাবর পাঁচ পৃষ্ঠার আবেদনপত্র দিয়েছেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের এক ভুক্তভোগী ছাত্রী। সেই আবেদনপত্রের একটি পিডিএফ ফাইল কুরিয়ার মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘দায়মুক্তিপত্র লেখানোর জন্য মাহমুদুর রহমান জনি আমাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। সেখানে প্রক্টর স্যারের কাছে পরামর্শ নেওয়া হয়- কীভাবে লেখা যায়। তখন প্রক্টর স্যার কিছু পয়েন্ট বলে দেন এবং গুছিয়ে লিখতে বলেন। আরেকজন সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে লেখার সময় প্রক্টর অফিসে কিছু সাংবাদিক চলে আসে। তাই আমাকে বের করে শৈবাল স্যারের গাড়িতে অন্যত্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে বাকি লেখা সম্পন্ন করা হয়।’

এ ছাড়া কুরিয়ার মাধ্যমে ‘যৌন নিপীড়ক জনিকে বাঁচাতে তৎপর উপাচার্য, নেপথ্যে...’ শিরোনামে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান রীতি অনুসারে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিললে অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠিত হয়। তবে জনির ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। সিন্ডিকেটের সভাপতি (উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম) সুকৌশলে জনিকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।’ এ ছাড়া অডিওটি মাহমুদুর রহমান জনি ও প্রক্টর আ স ম ‍ফিরোজ উল হাসানের কথোপকথনের একটি অংশ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘দায়মুক্তিপত্রের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে অনেক দিন আগে পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ওই ছাত্রী এসে আমার কাছে বন্ধ খাম দেয়। সেটি আমি উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দেই। সুতরাং জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

অডিও’র বিষয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। অডিও ক্লিপ সম্পর্কে আমি জানিও না। আর উপাচার্যকে চেয়ারে বসানোর আমি কে? আমার তো এত ক্ষমতা নেই।’

জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে আমার দায়ই নেই সেখানে দায়মুক্তিপত্র কেন লেখাব? এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্রাজিলের কোচ হওয়ার গুঞ্জনে কী বললেন স্কালোনি

জনতার কাতারে নেমে এসেছেন আলেমরাও

ধামরাইয়ে প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে অপহরণ, আটক ৪

শাহবাগে নেই ছাত্রদল-বাম

পাকিস্তান যেসব সমরাস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারতের বিরুদ্ধে

সান্তোসে আর মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলবেন নেইমার!

শাহবাগে খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র

বিনিয়োগ নিয়ে দেশে অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি : আমীর খসরু

বিপাকে ভারত, পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করছে তুরস্ক

সাধারণ যানবাহনের সঙ্গেই ছিল জুবাইদার গাড়ি

১০

মামলা তুলতে রাজি না হওয়ায় বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

১১

দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না আসলে ঢাকায় মার্চ : নাহিদ

১২

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হেফাজতের যে আহ্বান

১৩

এবার ভারতের স্টেডিয়াম উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

১৪

শাহবাগে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে শিবির

১৫

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সিলেটে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি

১৬

আবদুল হামিদের পালানো নিয়ে তারেক রহমানের মন্তব্য

১৭

মুচলেকায় মুক্তি পেল ৯৩ জেলে  / জব্দ করা ৬১৫ কেজি ইলিশ গেল এতিমখানায়

১৮

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

১৯

‘স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ মানুষের ভালো থাকার জন্য হতে হবে’

২০
X