

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘শিফ্টিং টুয়্যার্ডস অ্যা সাসটেইনেবল ওয়ার্ল্ড: রোল অব লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স’ প্রতিপাদ্যে লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্সেস ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, এই কনফারেন্সে সমসাময়িক বহু গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হচ্ছে, যা বর্তমান বিশ্বের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, একমাত্র অডিটোরিয়ামের নির্মাণকাজ চলমান থাকা সত্ত্বেও খোলা পরিবেশে তাঁবুর নিচে কনফারেন্স আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রতিপাদ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডই আজ মানুষ ও পৃথিবীর জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন এবং কনফারেন্স আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, পিএইচডি এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, এই সম্মেলন কেবল শিক্ষাগত উৎকর্ষের উদযাপন নয়, বরং পৃথিবী রক্ষায় আমাদের নৈতিক ও সম্মিলিত দায়িত্বের প্রতিফলন। তিনি বলেন, টেকসইতা কোনো বিকল্প নয়, এটি সময়ের অপরিহার্য প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি উদ্ভাবন, নীতিনির্ধারণ ও মানবসেবার মাধ্যমে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়, জল সংকট ও ভূমিকম্পসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জীবন ও পৃথিবী বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের বিভিন্ন শাখা কার্যকর গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কনফারেন্সের উদ্বোধনী সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের কলকাতার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সামীর কুমার মুখার্জি। ‘উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য: টেকসই বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি সীমিত সম্পদের কার্যকর ব্যবহার, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং কনফারেন্স আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
কনফারেন্সটি প্লেনারি সেশন, সায়েন্টিফিক সেশন, পোস্টার সেশন এবং ওরাল ও পোস্টার প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড সেশনে বিভক্ত। এতে অ্যানিমেল সায়েন্সেস, ম্যারিন রিসোর্সেস ও ব্লু ইকোনমি, জেনোমিকস ও বায়োইনফরমেটিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জিওস্পেশিয়াল স্টাডিজ, মাইক্রোবায়োম ও পাবলিক হেলথসহ টেকসই উন্নয়ন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আটশ' গবেষক তাদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। আয়োজকদের আশা, এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্স টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জীবন ও পৃথিবী বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক গবেষণা ও উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন
মন্তব্য করুন