রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগের হাতে দুই সাংবাদিক বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন। অভিযুক্তরা সবাই কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগরের অনুসারী।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ক্যাম্পাস গেটে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের খবর পেয়ে এগিয়ে যায় কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও ঢাকা ওয়েভ-এর কলেজ প্রতিনিধি শীতাংশু ভৌমিক অংকুর ও ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি পার্থ সাহা। এ সময় মারধরের ছবি তুলতে চেষ্টা করলে তাদের ফোন কেড়ে নেয় এবং মারধর শুরু করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এর মধ্যে ভৌমিক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ‘সাংবাদিক দেখার টাইম নাই বলে’ আরও বেশি মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী মেহেদী হাসান পলাশ, শেখ সুমন, ফাহিম তাজ, তানজিদ আহমেদ বাবু, রাতুল হাসান, তামিম মোল্লাসহ প্রায় ১০-১৫ জন এই দুই সাংবাদিককে মারধর করে।
মারধরের শিকার শীতাংশু ভৌমিক অংকুর বলেন, ক্যাম্পাস গেটে জটলা দেখে আমি এবং পার্থ এগিয়ে যাই। গিয়ে দেখি তারা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে। ছবি তুলতে গেলেই আমার ফোন কেড়ে নেয়। আমি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথেই আমাকে কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে থাকে। পার্থ আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে ওকে চুল ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে লাঞ্ছিত করে। এরপর আমাকে কলেজের মসজিদের সামনে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আবার মারধর করে।
পার্থ সাহা বলেন, আমরা ছবি তুলতে গেলে ওরা শীতাংশুকে মারধর শুরু করে। তখন আমি বলি, শিতাংশু সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ওকে মারছেন কেন আপনারা। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাকেও ওরা চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে আটকে রাখে আর শীতাংশুকে মারতে থাকে।
কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি যায়েদ হোসেন মিশু বলে, গত কয়েক দিন ধরেই কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। যার একটিরও কোনো তদন্ত বা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেওয়া স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। আমি খবর পেয়েই ক্যাম্পাসে যাই এবং ঘটনাস্থল থেকে শীতাংশু ও পার্থকে নিয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে যাই। পরবর্তীতে ন্যাশনাল হাসপাতালে দুজনকেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. মাহমুদ বলেন, দুই সাংবাদিককেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজনের অবস্থা গুরুতর। তার মাথায় ও তলপেটে আঘাতের কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ায় তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইনজেকশনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র লিখে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর বলেন, সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মারধরের বিষয়ে কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, আমি ঘটনাটা শুনিছি। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন