এস. এম. শাহাদাত হোসেন অনু
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরণের এক সম্ভাবনার গল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সৌজন্য
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সৌজন্য

আগামী ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) সফলতার ১৯তম বর্ষে পর্দাপণ করবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে ৪টি অনুষদের অধীনে (কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ) ২০টি বিভাগ নিয়ে সাবেক সরকারি জগন্নাথ কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকায় এটির অবস্থান।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮ তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয় এবং ওই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। পরে ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী এ প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। সময়ের পরিক্রমায় ১৮৮৪ সালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও পরে ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম ও সেই সাথে আইএ, আইএসসি, মাস্টার্স বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ প্রতিষ্ঠানটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়।

সময়ের ক্রমধারায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ অর্থাৎ বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে নানা মহৎ ও আলোচিত ব্যক্তিরা। যারা বিভিন্ন সময়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং সামনে এগিয়ে নিয়েছে। এ সকল মহৎ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ, প্রখ্যাত আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বিশারদ এবং শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান , ব্রিটিশবিরোধী নৌ-বিদ্রোহের শহীদ মানকুমারী বসু ঠাকুর, সাহিত্যিক শামসুল হক ,অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, লেখক ও সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা প্রবীর মিত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী, কবি-কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদ সাবের, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমান, ঔপন্যাসিক আলাউদ্দিন আল আজাদ, কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসসহ আরও অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ১৮ হাজারের বেশি। এ ছাড়া এমফিল ২৪৫ জন ও পিএইচডি করছেন ১৪১ জন শিক্ষার্থী। আর ৭৩৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

পিছিয়ে নেই অর্জনের ঝুড়িও সম্প্রতি দেশসেরা বিভাগ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে রসায়ন বিভাগ। বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরাও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়োগ পেয়েছে। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় ৮৭ জন ক্যাডারে উত্তীর্ণ, বিজেএস জুডিসিয়াল পরীক্ষায় ১১ জন শিক্ষার্থী জায়গা পেয়েছে। ব্যাংক, বিসিএস, সরকারি চাকরি, বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি সংস্থায় চাকরি করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দিন দিন গবেষণার খাতাও এগিয়ে যাচ্ছে, তারা অর্জন করছে নানা পুরস্কার।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স প্রায় দেড় যুগ হলেও এখনো পর্যন্ত তেমন অবকাঠামো গত উন্নয়ন হয়নি। সম্প্রতি সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ২০০ একর অভিধান করেছে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ জমি অধিগ্রহণ হয়নি। হল না থাকার বিপাকে আছে শিক্ষার্থীরা যদিও সম্প্রতি একটি ছাত্রী হল হয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তেমন সুযোগ-সুবিধা পান না তবুও তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগ্রাম করে এগিয়ে যাচ্ছে নিজ মহিমায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীদের আশা দ্রুত জগন্নাথ একটি বড় ক্যাম্পাস পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত হবে।

সম্প্রতি বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক মূল্যায়নে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৩.৭৫ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার কাজ অনেকটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন রিটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু করা। সেটা আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি ২০২৪ সালের মধ্যে সেগুলো প্রায় শেষ হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য প্রাথমিক কাজগুলো শেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য হল নির্মাণে কাজ করা। আমাদের ছেলেমেয়েগুলো অনেক কষ্টে এখানে থাকে। আমরা চাই কিছু হল নির্মাণ করে আবাসন সংকট কমিয়ে আনা।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে সাতটি অনুষদে ৩৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯০ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ১৫৬ জন, সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন ও প্রভাষক ৬৭ জন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দেড়যুগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এস এম শাহাদাত হোসেন অনু : প্রাবন্ধিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীকে হুমকি, অস্ত্রধারী বিএনপির সেই নেতা গ্রেপ্তার

ইরানের দফায় দফায় হামলা, ইসরায়েলজুড়ে বিস্ফোরণ

সীমান্তে মাদক, অস্ত্রসহ ৩ রোহিঙ্গা আটক

ইরানে মার্কিন হামলা নিয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া

কমপ্লিট শাটডাউনে যাচ্ছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

স্টেট ইউনিভার্সিটির নতুন ভিসি অধ্যাপক আখতার হোসেন খান

এবার টেস্ট অধিনায়কত্বও ছাড়ছেন শান্ত!

বিল দখল নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, বিএনপি নেতা নিহত

চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের শাহবাগ অবরোধ

ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায় স্পেন

১০

হরমুজ প্রণালি থেকে ফিরে গেল দুই সুপারট্যাঙ্কার

১১

ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন

১২

যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো তুহিনকে

১৩

ইসরায়েলের হামলায় ১০ আইআরজিসি সদস্য নিহত

১৪

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে এক মাসে ৭৯ জনকে পুশইন

১৫

সচিবালয়ে আন্দোলনকারী কর্মচারীদের কর্মবিরতি

১৬

আবারও হামলা / রাশিয়ার সেই প্রস্তাব রাখলে এ পরিস্থিতিতে পড়ত না ইরান

১৭

হাসিনার মতো দেশকে বিকিয়ে দেওয়া যাবে না : রাশেদ প্রধান 

১৮

কুমিল্লা বোর্ডে এইচএসসিতে ঝরে পড়েছে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী

১৯

ইরানের ৬ বিমানবন্দরে হামলা, ১৫ উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

২০
X