আলকামা রমিন, খুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষার্থীদের ‘নোবেল পুরস্কার’ খ্যাত হাল্ট প্রাইজের প্রাপ্তি, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা

হাল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ‘এ্যাপিয়ন’-এর সদস্যরা। ছবি : সংগৃহীত
হাল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ‘এ্যাপিয়ন’-এর সদস্যরা। ছবি : সংগৃহীত

‘হাল্ট প্রাইজ’ কে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসায় উদ্যোগ প্রতিযোগিতা। যৌথভাবে যার আয়োজক জাতিসংঘ ও বিল ক্লিনটন ফাউন্ডেশন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘হাফিংটন পোস্ট’ এই প্রতিযোগিতার নাম দিয়েছে ‘শিক্ষার্থীদের নোবেল পুরস্কার’। প্রতি বছর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আহ্বানে বহু শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই প্রতিযোগিতার সুবাদে। সমস্যার সমাধান ও সেই সমাধান থেকে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করার জন্য পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী দলকে দেওয়া হয় ১ মিলিয়ন ইউএস ডলার (সাড়ে ১০ কোটি টাকা)।

এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের পেরোতে হয় চারটি পর্ব। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দল হাল্ট প্রাইজে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে লড়াই করে এ বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘এ্যাপিয়ন’ জায়গা করে নেয় একদম চূড়ান্ত পর্বে, শীর্ষ ১২টি দলের একটি হয়ে।

‘এ্যাপিয়ন’-এর সদস্যরা হলেন, খুবির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিনের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গাজী মো.আশরাফ উদ্দিন দুর্জয়, এবং একই ডিসিপ্লিনের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শেখ মোহাম্মদ তাহমিদ, নুসরাত জাহান রিতু ও আসিফ মাহমুদ তুষার।

পোশাক ও ফ্যাশন শিল্পের একটি উদ্ভাবনী সামাজিক উদ্যোগ

এবারের নির্বাচিত সমস্যা, রি-ডিজাইনিং ফ্যাশন, যা শিক্ষার্থীদের দলগুলোকে ফ্যাশন বা পোশাক শিল্পে একটি লাভজনক ব্যবসায়িক উদ্যোগ তৈরি করতে বলে যা মানুষ ও পৃথিবীকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশি চার তরুণ-তরুণী উপস্থাপন করেন ‘এ্যাপিয়ন’ প্রকল্প। এ প্রকল্প বাংলাদেশের নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার স্বল্প খরচের পোশাক সেবার একটি গার্মেন্টস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১ থেক ১২ বছরের লাখ লাখ শিশু কিশোরদের প্রতি ২ থেকে ৬ মাস বা প্রতি বছরে ব্যবহৃত পোশাক বাদ দিতে হয়, পাশাপাশি আবার নতুন পোশাক ক্রয় করতে হয়ে, যা স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য কষ্টসাধ্য। শিশু কিশোরদের অব্যবহৃত বা বাদ দেওয়া পোশাক সংগ্রহ করে, গ্রিন ওয়াশিংয়ের মাধ্যমে রিসাইক্লিন করে ভোক্তাদের শিল্প পণ্যে পরিণত করা। এতে পণ্যের মান ঠিক রেখে স্বল্প লাভে বিক্রয়। এমনই এক সুলভমূল্যের পোশাক সেবার পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছিল হাল্ট প্রাইজে।

প্রতিযোগিতার শুরুতে ভেবেছিলেন এত দূর যাবেন? প্রশ্ন শুনে দুর্জয় মুচকি হেসে জানালেন, আমাদের ভাবনা ছিল ভালো করার। হাল্ট প্রাইজ নিয়ে আমাদের আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। চুড়ান্ত পর্বে আসতে পারবো এমন বিশ্বাসী ছিলাম না, কিন্তু ভালো কিছু করার জন্য পরিশ্রমী ছিলাম সবাই। সুতরাং বলা চলে, প্রতিটি পর্যায়ে শতভাগ চেষ্টা আমাদের ছিল।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এত বড় একটি প্রতিযোগিতায় গিয়ে ভালো করতে হলে সবচেয়ে বেশি কী প্রয়োজন, এমন প্রশ্নে দুর্জয় বলেন, ‘আইডিয়ার কোনো মূল্যই নেই, যদি তা বাস্তবায়নের সুযোগ না থাকে। মার্কেট রিসার্চ, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, প্রোডাক্ট ফিজিবিলিটি, রেভিনিউ মডেল, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—সবকিছুর দিকে নজর রাখতে হবে। বিভিন্ন চলমান ব্যবসা উদ্যোগ প্রতিযোগিতাগুলোতে আমরা আইডিয়াকে যত গুরুত্ব দিই, এসব বিষয়কে দিই না—এটাই সবচেয়ে বড় ভুল। এমন একটি ব্যবসায়ের আইডিয়া বের করা, যা সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি যা মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। এ ধরনের প্রতিযোগিতা যেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও বেশি আয়োজিত হয়, তা নিশ্চিত করা।

তারা জানান, যদি বিশেষ করে হাল্ট প্রাইজের কথা বলি, এই প্রতিযোগিতাকে অন্য সব প্রতিযোগিতার মতো করে না দেখে নিজেদের ব্যবসা বাস্তবায়নের সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত প্রতিযোগীদের।

অভিজ্ঞতাও বড় পাওয়া

এই দীর্ঘ যাত্রাটা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতাই হয়ে থাকবে চার তরুণের কাছে, সামনে বসে যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মানুষ আমাদের কথা শুনছিলেন, তখনকার অনুভূতি প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ জানা নেই আমার। আমরা বলব, দিন শেষে আমরা সবাই বিজয়ী ছিলাম কারণ বলতে গেলে আমরা সবাই সবার কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখতে পারছি। সবাই যেমন আমরা বক্তা আবার শ্রোতাও। আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারা আমার দলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এবং সর্বোপরি দেশের জন্য গৌরবের বলে মনে করি। চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেও যাত্রা এখানেই শেষ নয়। ‘এ্যাপিয়ন’ সদস্যদের মতে—কেবল শুরু। এই ব্যবসাকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রথম পর্যায়ে তারা কাজ শুরু করেছেন এবং তারা জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রাপ্ত বয়সের মানুষের পোশাকশিল্প নিয়ে কাজ শুরু করবেন। তারা জানান, আপাতত পরিশ্রম ও মানুষের বিশ্বাসই তাদের একমাত্র পুঁজি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উল্টোপথের ট্রাকের চাপায় স্বপ্ন হারালেন মতিন-হাফিজ

চট্টগ্রামের দুই বর্জ্যকেন্দ্র হবে আধুনিক ল্যান্ডফিল : চসিক মেয়র

পরমাণু শক্তি কমিশনে ১৮২ পদে বড় নিয়োগ, আবেদন করুন দ্রুত

ক্যাম্পাস থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সরাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

আরও ৪ দেশে এনআইডি কার্যক্রমের অনুমতি

ব্রাজিল দলে জায়গা না পেয়ে নেইমারের রহস্যময় বার্তা

বদনজর ও কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার ৫ আমল

বিশ্বকাপজয়ী মেসিকে নিয়ে মিলল সুসংবাদ

চিকন শিশুকে মোটা বলায় সংঘর্ষ, আহত ১০

১০

চিরকুট লিখে প্রাণ দিলেন ব্যবসায়ী

১১

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন

১২

আফগানিস্তানে যাত্রীবাহী বাস উল্টে নিহত কমপক্ষে ২৫

১৩

প্রধান শিক্ষক যুবলীগ নেতা, ফাঁদে পড়ে ইংরেজি শিক্ষক গরুর রাখাল

১৪

প্রতীকী মূল্যে মসজিদ-মন্দিরকে জমি দিয়ে ইতিহাস গড়ল রেলওয়ে

১৫

নওগাঁয় চালককে হত্যা, পাঁচজনের যাবজ্জীবন

১৬

শাহরুখ না, শাকিবকে নায়ক হিসেবে চান মনিকা

১৭

শেখ হাসিনাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান, ভূতের মুখে রাম নাম : অ্যাটর্নি জেনারেল

১৮

ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য দল ঘোষণা, ফিরেছেন জুনায়েদ সিদ্দিক

১৯

ভিকির মতো শান্ত মানুষ সাইকো থ্রিলার ভাবেন কীভাবে, প্রশ্ন নাবিলার

২০
X