তানজিম মাহমুদ
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ১০:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জবির মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন 

জবির মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। গ্রাফিক্স : কালবেলা
জবির মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। গ্রাফিক্স : কালবেলা

২০০৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সহকারী ইমাম পদে নিয়োগ পান আনোয়ার হোসেন। সাত বছর ধরে খতিবের (প্রধান ইমাম) সঙ্গে পালা করে নামাজ পড়াতেন তিনি। অন্যদিকে ২০০৭ সালে একই সময়ে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ পান মো. ইমদাদুল হক। তিনিও কোরআনের হাফেজ ও আলেম। সাত বছর মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বর্তমান খতিব সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে তাদের বাধে বিপত্তি। তারাবি নামাজের ইমামতি করার সময় খতিব সালাহউদ্দিনের কোরআন তেলাওয়াতের ভুল ধরতেন জানান সহকারী ইমাম আনোয়ার হোসেন ও মুয়াজ্জিন ইমদাদুল হক। বারবার এমন হলে একপর্যায়ে খতিব সালাউদ্দিনে‍র সঙ্গে তাদের সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ে। এরপর খতিব সালাহউদ্দিন এই সহকারী ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে অপবাদ দিয়ে মসজিদ কমিটির তৎকালীন সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে অন্য দপ্তরে বদলি করিয়ে দেন।

কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের কিছুদিন রেজিস্ট্রার দপ্তরে, পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে বদলি করে দেওয়া হয়। সেই ব্যতিক্রম বদলি থেকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজ করেন সহকারী ইমাম আনোয়ার হোসেন। আর মার্কশিট দেওয়ার কাজ করেন মুয়াজ্জিন ইমদাদুল হক।

অন্যদিকে সেই সময় থেকে মসজিদের সহকারী ইমাম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার (পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে সহকারী লাইব্রেরিয়ান) শেখ মো. সালাহ উদ্দিনকে ও মুয়াজ্জিন হিসেবে বাসের হেলপার মো. হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুয়াজ্জিনের পাশাপাশি বাসের হেল্পার হিসেবেও কাজ করেন হাসান। মূল বেতনের পাশাপাশি হাসান পান অতিরিক্ত সম্মানীও।

এদিকে ১১ বছর ধরে নানা আশ্বাস পেলেও মসজিদে ফিরতে পারেননি সহকারী ইমাম আনোয়ার হোসেন ও মুয়াজ্জিন ইমদাদুল হক। নিজেদের মজলুম দাবি করে আনোয়ার হোসেন বলেন, তেলাওয়াতের ভুল ধরতে গিয়ে আমরা সাজা পেলাম। ১১ বছর তো হয়ে গেল। আমরা মসজিদে ফিরতে চাই। কোরআনের আলোয় আলোকিত করতে চাই। আমরা ইমাম ও মুয়াজ্জিন থাকলেও অন্য দপ্তরে সার্টিফিকেট-মার্কশিট দেওয়ার কাজ করতে হচ্ছে। এ দপ্তরের খেদমত আর কতদিন। মসজিদের খেদমত করতে পারছি না। এর চেয়ে কষ্টের কি হতে পারে।

অন্যদিকে মুয়াজ্জিন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ইমদাদুল হক বলেন, দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা কারও গিবত গাইব না। তবে আমরা ইমাম-মুয়াজ্জিন থাকতেও সহকারী লাইব্রেরিয়ান-বাস হেলপার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। আমরা মসজিদে ফিরতে চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নজিরবিহীন এমন বদলি করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। সহকারী লাইব্রেরিয়ান নামাজ পড়ানোয় সহকারী ইমামের জন্য বরাদ্দ বসবাসের রুম পান। এছাড়া প্রতি ঈদ, রমজানসহ নানা সময়ে বোনাস ভাতা পান।

এদিকে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে থেকে সহকারী ইমামের কাজ করা শেখ মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খতিব না থাকলে আমি নামাজ পড়াই। কিন্তু আমি কোনো আলাদা বেতন ভাতা বা সুযোগ সুবিধা পাই না। মসজিদের যে ছোট্ট রুম পেয়েছি। তবে প্রতিমাসে ইউটিলি বিল দিতে হয়।

খতিব সালাহউদ্দীনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ:

মসজিদের পাশে বহু বছরের পুরোনো বড় কাঠলিচু গাছ। নিজ ইচ্ছায় প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে গাছটি কেটে ফেলেন খতিব। লিচু পাড়ার জন্য বাচ্চারা ঢিল দেওয়ায় তিনি এটি করেছেন দাবি করেন। এ গাছ কাটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনা করে। কিন্তু সাবেক ট্রেজারার ড. কামালউদ্দিন আহমদ ও তার পিএস আমিনুল ইসলামের জন্য বিচারের বদলে ওই যাত্রা বেঁচে যান তিনি।

সর্বশেষ সম্প্রতি মসজিদে এক ছাত্রীকে একা রাত সাড়ে ১১টায় থাকতে দেখা যায়। প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টি জানার পর ইমাম ও ওই মেয়েকে প্রক্টরিয়াল টিম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তার আগেই ওই মেয়ে হলে চলে যান।

এ ঘটনায় প্রক্টর পরের দিন ইমামকে অফিসে তলব করলেও আসেননি তিনি। খতিব সালাহউদ্দীনের বিষয়ে এসব নানা অভিযোগের তদন্ত চলমান। তাই মসজিদে সহকারী ইমাম দিয়ে নামাজ পড়াতে বলা হয়েছে।

এসব বিষয়ে খতিব সালাহউদ্দীন বলেন, আমি কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাই না। লিচু গাছ মসজিদের টিনে শব্দ হয় বলে কেটেছি।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মসজিদের খতিব সালাহউদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকায় সহকারী ইমাম দিয়ে নামাজ পড়াতে বলা হয়েছে।

মেয়েদের রাতে মসজিদে নামাজ না পড়ার কোনো নির্দেশনা আছে কিনা প্রশ্নে প্রক্টর আরো বলেন, ঘটনা সেন্সিটিভ বলে সাময়িক সময়ের জন্য ইশার নামাজে নিষেধ ছিল। এখন আগের মতো রাতে ইশার সময়ও মেয়েরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে। কোনো বিধিনিষেধ নেই।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড.লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, আমি আজই চিঠি পেয়েছি। ঘটনা বিস্তারিত জেনে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১২ শিক্ষকের সেই স্কুলে এবারও সবাই ফেল

দ্বিতীয় দিনের বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা শেষ

এসএসসিতে আমিরাতের ২ প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৭২ শতাংশ

এক দেশে ৩৫%, অন্যদের ২০% শুল্কের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

এসএসসির ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন

গাজায় বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সেনা নিহত, উত্তেজনা চরমে

প্রথম প্রেম ভুলতে পারেননি আনুশকা

রাবিপ্রবিতে প্রথমবার ছাত্রদলের কমিটি

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় রংপুরের জয়

প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাঁটলেই ৭ পরিবর্তন আসবে আপনার

১০

কক্সবাজারে এসএসসিতে ফেল করায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

১১

নদীতে সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর রোমহর্ষক বর্ণনা

১২

যমজ দুই ভাইয়ের আশ্চর্যজনক ফলাফল

১৩

ছবিতে প্রথমে কী দেখতে পাচ্ছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনি আসলে কেমন

১৪

৮ শিক্ষকের স্কুলে ৯ পরীক্ষার্থী, অথচ সবাই ফেল

১৫

চলন্ত বাইক থেকে ফেলা হলো ছাত্রলীগ নেতাকে, এরপর যা ঘটল

১৬

ইরান ভ্রমণে না যেতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

১৭

রাজধানীতে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের দগ্ধ ৫

১৮

ছুটির দিনেও খোলা থাকবে কাস্টম হাউস

১৯

দুপুরের মধ্যে ৪ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

২০
X