বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২
আমজাদ হোসেন শিমুল, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বন্ধন সেটি ছিন্ন হয়ে গেছে

রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান। ছবি : কালবেলা
রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান। ছবি : কালবেলা

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বন্ধনে কেমন যেন চিড় ধরেছে। দিন-রাত গাদা-গাদা বই পড়েও শিক্ষার্থীদের মানসিক উৎকর্ষ হচ্ছে না সাধন। শিক্ষকদেরও পেশার প্রতি নেই সেই দরদ। শিক্ষাব্যবস্থাতেও নেই কোনো পরিবর্তন। সবকিছু মিলেই ছাত্র-শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজ করছে অমানিশা। শিক্ষক দিবসে এই অমানিশার ঘোর কেটে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যাশা রাজশাহীর নবীন-প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কালবেলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষানগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবীণ-নবীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর মধ্য দিয়ে উন্নত-কার্যকরী শিক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারে রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষক হবে আদর্শ ও নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন। শিক্ষককে দেখে আমাদের দুই হাত মাথায় উঠবে আমরা মাথানত করে দাঁড়াব। অর্থাৎ সমাজের বাতিঘর একজন শিক্ষক। সমাজের প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষিত হয়েছেন। একজন শিক্ষক হবে একাধারে শিক্ষক, অভিভাবক এবং একজন উত্তম প্রশিক্ষক। যে শিক্ষক হবে শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষাও দেবে।

তিনি বলেন, একটি জাতির মান নির্ভর করে নাগরিকের মানের ওপর। নাগরিকের মান নির্ভর করে শিক্ষার মানের ওপর। আর শিক্ষার মান নির্ভর করে শিক্ষকের মানের ওপর। সুতরাং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে গেলে আগে শিক্ষকের মান উন্নত জরুরি। এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বন্ধন সেটি ছিন্ন হয়ে গেছে। এই বন্ধনকে দৃঢ় করতে হবে। এজন্য শিক্ষকদের মধ্যে অভিভাবকত্ব থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ যদি শিক্ষকের ওপর থাকে তাহলে সেই শিক্ষাব্যবস্থা আগায় না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ বলেন, আসলে শিক্ষক দিবস প্রচলনের মূল টার্গেট ছিল শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। শিক্ষকের কাজ হলো, শিক্ষা কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুশ করার পাশাপাশি তাদের মানসিক-আত্মিক উন্নতি ঘটানো। এজন্য শিক্ষককে অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে। সুতরাং পাঠদান ও নৈতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি বন্ধুসুলভ আচরণের মধ্য দিয়ে নৈতিক উৎকর্ষতা সাধন ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নেওয়াই শিক্ষকের দায়িত্ব।

শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ক্লাস থি-তে প্রথম ইংরেজি পড়া শুরু করেছিলাম। তার আগে মাত্র দুটি বই বাংলা ও গণিত পড়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা প্রি-স্কুলেই ৮-১০ বই দিয়ে আমাদের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষাভীতি তৈরি করেছি। ফলে এই সন্তানগুলো শিক্ষাভীতি নিয়ে মাধ্যমিকে এসে তারা বেঁকে বসে, বিনোদন খোঁজে। বিনোদনের জন্য মাঠ নেই, যে পাঠ আছে সেটিও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠেনি। যদিও আনন্দদায়ক পাঠের জন্য কারিকুলাম কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে; কিন্তু সেটিও সফলতায় যায়নি। বর্তমান শিক্ষার মান এগিয়েছে বলে মনে করি না। সন্তানরা ইংরেজি, বাংলা কিংবা গণিতে ফ্রি-হ্যান্ডে আসতে পারেনি। তারা মোবাইল-কম্পিউটার টেকনোলজিতে এগিয়েছে, ভালো গেমস খেলতে পারছে। এই গেমস খেলার মতো তারা যদি পাঠ্যক্রমকে খেলতে পারত তাহলে সফলতা ছিল। তাই, যুগের চাহিদা অনুযায়ী জায়গাটি ঢেলে সাজানো উচিত।’

৯০-এর দশকের শিক্ষার্থী ও রাবির নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান সবলেন, তিন রকমের শিক্ষায় আমাদের বেড়ে ওঠা। পারিবারিক শিক্ষা, প্রকৃতির শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এ ছাড়া প্রাত্যহিক জীবনচলায় আমরা নিয়তই শিখি। আমৃত্যু আমাদের শিখনকাল। জীবনের প্রতিটি পর্বে যার যার কাছে শিখি, যাদের শেখাতে গিয়ে নিজে শিখি তারা প্রত্যেকে আমার শিক্ষক। সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনেই শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। সেই শিক্ষাব্যবস্থার আলোকে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হয়নি। বর্তমানে যে শিক্ষাব্যবস্থা তা কোচিং ও গাইডনির্ভর। শিক্ষকরা ক্লাসে ক্লাস না নিয়ে কোচিংয়ে গিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষাকে একটি পণ্যের মতো বানানো হয়েছে।

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অহিন তনয় অরণ্য বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা স্কুল-কলেজ নির্ভরের পরিবর্তে প্রাইভেট-কোচিংনির্ভর হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজের পাঠদান কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। স্কুল-কলেজে ভালো পাঠদান দেওয়া হলে আমাদের কেউই কোচিং-প্রাইভেটনির্ভর হতো না। সেই সুযোগে প্রাইভেট-কোচিং সেন্টারগুলোও এটিকে ব্যবসা আকারে নিয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বের সেরা সাত স্টেডিয়ামের তালিকায় জায়গা পেল সিলেট

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল সচল

আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন : জামায়াতকে প্রধান উপদেষ্টা

আজ শুভ ‘ভাইফোঁটা’

মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে আহতদের তারেক রহমানের সহায়তা

সেন্টমার্টিনে অভুক্ত প্রাণীর পাশে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন

গণতান্ত্রিক চর্চায় নির্বাচনের বিকল্প নেই : এনপিপি

জামায়াত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

আমরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ : মুহিউদ্দীন রাব্বানী

৩১ দফা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা : কফিল উদ্দিন

১০

‘একের পর এক পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র’

১১

এনসিপি ও জামায়াতকে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

১২

টুঙ্গিপাড়ায় মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ

১৩

সেনাবাহিনীর উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার, বললেন আইন উপদেষ্টা

১৪

ইউআইইউতে ‘লঞ্চপ্যাড বাই ইউআইএইচপি-ইউআইইউ’ প্রতিযোগীতার দ্বিতীয় সাইকেলের গ্রান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত

১৫

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

১৬

নির্বাচিত সরকার এলে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ : গভর্নর

১৭

‘চট্টগ্রামের সব বিজনেস ফোরাম ঐক্যবদ্ধ থাকলে প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব’

১৮

পশুর নদী থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

১৯

হিন্দু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করতে চাই : সালাউদ্দিন বাবু

২০
X