জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত’ এক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (৮ জুন) মধ্য রাতে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ওই ছাত্রের নাম নিশাত আব্দুল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। গত ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
অব্যাহতির প্রায় সাড়ে চার মাস পর ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে এই ছাত্রদল নেতা লেখেন, আমি নিশাত আব্দুল্লাহ, আজ ০৯ জুন ছাত্র রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিচ্ছি। এখন থেকে ছাত্রদল বা বিএনপির কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক কার্যকলাপে আমার কোনো ভূমিকা বা দায় থাকবে না।
এ ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার সহপাঠী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ফেসবুক পোস্ট ও তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে নিশাতের রাজনীতি থেকে দাঁড়ানোকে ছাত্রদলের ব্যর্থতা ও দুঃসময়ের ছাত্রনেতাদের অবমূল্যায়নের কথা বলেন।
রাজু হাসান রাজন নামে এক ছাত্রদল নেতা তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ৫ আগস্টের আগে রাজপথে যে গুটিকয়েক সাহসী কর্মী রাজপথে থেকে মিছিল করেছে নিশাত ছিল তাদের মাঝে একজন। যারা নোংরা রাজনীতি করে ছেলেটাকে বহিষ্কার করেছিলেন তারা মনে রাখবেন, আল্লাহ সব কিছুর হিসাব রাখেন।
জাবি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দীন তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ২০২১ থেকে ২০২৩—এই তিন বছর আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রদলের প্রতিটি কর্মসূচি, মিছিল বা মানববন্ধনের নিউজ কভার করেছি। সেসময় জাবি ছাত্রদল ছিল একপ্রকার অস্তিত্ব সংকটে। প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক মাত্র ৫-৭ জন নিয়ে কর্মসূচি আয়োজন করতো তারা। নিশাত আবদুল্লাহ ভাই ছিলেন তাদের একজন। এইরকম প্রতিকূল সময়ে, যখন কেউ পাশে ছিল না, তখন নিশাত ভাইরাই ছিলেন ছাত্রদলের ভরসা। কোনো লোভ কিংবা ক্ষমতা ছাড়াই শুধু বিশ্বাস আর ভালোবাসা থেকে কাজ করে গেছেন দলের জন্য। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সরকারের সমালোচনা করার কারণে ১০ মাস টিম লিডারের দায়িত্ব পালনের পরও টিআইবির ইয়েস গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তিনি আরও লেখেন, নিশাত ভাই আজ জাবি ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করেছেন জেনে খুবই খারাপ লাগলো। ছাত্রদল যদি এইরকম দুঃসময়ের কান্ডারিদের সম্মান করতে না পারে, তাহলে সংগঠন টিকবে কীভাবে।
স্ট্যাটাসের বিষয়ে নিশাত বলেন, পারিবারিকভাবে আমরা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত। স্বৈরাচার আমলে আমার লক্ষ ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করা। তবে স্বৈরাচার পতনের পর ছাত্ররাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন আশা করেছিলাম সেটি দেখতে পাচ্ছি না। এখনো জাবি ছাত্রদল আদুভাইদের গ্রুপিং নির্ভর রাজনীতি করে যাচ্ছে। আমাকেও গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হতে হয়েছে। যুক্তিতর্ক, পলিটিক্যাল সার্কাজম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা তাদের নেই। যা আমার চিন্তাভাবনার সাথে যায় না। এজন্য রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আগামীতে যদি কেউ স্বৈরাচার হয়ে উঠতে চায়, আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও দ্বিধা করবো না।
এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, তিনি তো দল থেকে বহিষ্কৃত। তাই এ বিষয়ে আমরা কোনো কিছু ভাবছি না।
জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রদল জাবি শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ১৭৭ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে জহির উদ্দিন বাবরকে আহ্বায়ক এবং ওয়াসিম আহমেদ অনীককে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির এক জরুরি সভায় পদবঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে হট্টগোল ও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে সভাটি স্থগিত ঘোষণা করে দেয়। এরপর সদ্য আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নিশাত আব্দুল্লাহ, শামসুজ্জামান সায়েম এবং হাসিব বিন আব্দুল হাইকে শাখা ছাত্রদল থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় সংসদ।
মন্তব্য করুন