রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু হেনা মো. মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও হেনস্তার অভিযোগ করেছে এক শিক্ষার্থী। রোববার (১৯ মে) এ ঘটনায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রেজওয়ান গাজী মহারাজ ও একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ মারুফ।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় সনদ উত্তোলনের জন্য সনদ শাখা দপ্তরে যাই। আমার সঙ্গে একই বিভাগের মো. মারুফ হাসান উপস্থিত ছিলেন। দপ্তর থেকে জানানো হয়, সনদ উত্তোলন করতে গেলে সনদ প্রস্তুত হয়েছে, তবে কাগজ সংকটের কারণে প্রিন্ট হয়নি এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবু হেনা মো. মোস্তফা কামালের কাছে যেতে বলেন।
আমি উনার কাছে গিয়ে সার্টিফিকেটের কাগজ না থাকার কারণ এবং কবে নাগাদ পেতে পারি তার সম্ভাব্য তারিখ জানতে চাইলে তিনি আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হন এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নন বলে জানান। তখন আমি বলি, অফিস থেকে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে বিধায় আমি জানতে চেয়েছি। এমতাবস্থায় তিনি চেয়ার থেকে ওঠে এসে আমাকে মারতে আসেন এবং উনার অফিস থেকে বের করে দেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অন্যথায় আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার' এ একটি পোস্টে ঘটনার বিবরণ দেন আরেক ভুক্তভোগী মারুফ। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট লেখার যে কাগজ সেটাই নেই বিষয়টা জানতে চাইলে অফিস থেকে পাঠানো হয় ডেপুটি কন্ট্রোলার আবু হেনা এম. মোস্তফা কামাল সাহেবের কাছে। তার কাছে নম্রভাবে কাগজ কবে আসতে পারে জানতে চাইলে, তিনি আমাদের চেয়ার থেকে ওঠে মারতে আসেন। অফিসের লোকজন বলে তার মাথায় সমস্যা আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মারুফ বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসনের প্রতি আমার দাবি, যথাযথ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিযোগের বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী রেজওয়ান গাজী মহারাজ বলেন, আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা লিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমন লোকদের এত ভালো ভালো জায়গায় বসিয়ে রাখার কারণ জানতে চাই। এ ছাড়া এরা যেন আর কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, তারা নিজের সার্টিফিকেট না অন্যের তদবিরে এসেছিল। তাকে যথাযথ জবাব দেওয়া হয়েছে। সে বারবার রিপিট করছিল। আমার একটা সমস্যার কারণে রিপিটেশনে ঝামেলা হয়। আমি তাদের এটা জানিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম পরে আসতে। তবে তারা রিপিট করেই যাচ্ছিল। পরে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিল।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, আমি জরুরি কাজে বাইরে আছি। তবে এ ঘটনা ঘটেছে জানতে পারলাম। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সনদের কাগজ সংকটের বিষয়ে জানতে তিনি বলেন, আমাদের কোনো কাগজের সংকট নেই। স্বাভাবিকভাবে কাজ করলেও যে কাগজ আছে তা দিয়ে দীর্ঘদিন চলা যাবে।
উল্লেখ্য, একাধিক সাবেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাদের অনেকের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান খান বলেন, আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল অনেকের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করেন। বিশেষ করে সুপারিশ থাকলে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এমন ঘটনার শিকার আমিও হয়েছিলাম একবার।
মন্তব্য করুন