বলিউডের আকাশে কোটি কোটি তারকা আলো ছড়ায়। কেউ ঝলমল করে, আবার কেউ নিভৃতে থেকেও পর্দায় অমর হয়ে যায়। শহিদ কাপুর সেই অভিনেতাদের অন্তর্ভুক্ত, যিনি ‘ইশ্ক বিশ্ক’-এর কিশোর হিরো থেকে শুরু করে আজও বহুমুখী চরিত্রে দর্শককে মুগ্ধ করে চলেছেন।
২০০৩ সালে ‘ইশ্ক বিশ্ক’-এর মাধ্যমে শহিদ বলিউডে অভিষেক করেন। সেই স্কুলের ক্লাসরুমের কিশোরীরা, যারা তার কাটআউটে ঝুঁকে ছিল, আজও সিনেমার পর্দায় তার উপস্থিতিতে হারিয়ে যায়। কিন্তু ২২ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কখনো সহজ পথ বেছে নেননি।
শহিদের জন্মই হয়েছে সিনেমার পরিবেশে। মা নীলিমা আজিম, বাবা পঙ্কজ কাপুর—দুই প্রজন্মের চলচ্চিত্র জগত তার রক্তে প্রবাহিত। তবু তিনি কখনো পিতৃতুল্য পরিচয়কে ছদ্মবল হিসেবে ব্যবহার করেননি। তার একমাত্র সঙ্গী ছিল অভিনয়, চরিত্র ও আত্মবিশ্বাস।
শুরুটা ছিল ঝঞ্ঝার মতো। ‘ফিদা’, ‘দিল মাঙ্গে মোর’, ‘দিওয়ানে হুয়ে পাগল’—চেষ্টা ছিল, কিন্তু সাফল্যের হাতছানি অনেক দূরে। তবে শহিদ থেমে থাকেননি। তিনি জানতেন—সত্যিকারের অভিনয় জয় তার নিজের হাতেই কাটা দাগের মধ্য দিয়ে আসে।
২০০৬ সালের ‘চুপ চুপ কে’ এবং ‘ওয়াহ! লাইফ হো তো আইসি’ তাকে নতুন দিশা দেখায়। আর ‘হায়দার’-এ তিনি প্রমাণ করেন নিখাদ শিল্পীর আত্মসমর্পণ। শেকসপিয়ারের ‘হ্যামলেট’-কে তিনি এমনভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে কাশ্মীরের নিঃশব্দ বেদনার কণ্ঠ যেন দর্শকের অন্তরে প্রবেশ করে।
তবু শহিদ কাপুর কখনো ‘সুপারস্টার’ শব্দের ছায়ায় নিজেকে আটকে রাখেননি। তিনি চেয়েছেন শিল্পকে, চেয়েছেন চরিত্রকে, চেয়েছেন অভিনয়কে। ঝুঁকি নিয়েছেন, পরীক্ষা হয়েছেন, কখনো ব্যর্থ হয়েছেন। ‘কবীর সিং’ এবং ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন—যখন ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা একত্রিত হয়, দর্শক আকর্ষণ কখনো ফিকে হয় না।
শহিদের চলচ্চিত্র-জীবন যেন এক সঙ্গীত—উচ্চস্বর, নিম্নস্বর, কখনো ব্যথা, কখনো আনন্দ। দর্শক সেই সুরে হারিয়ে যায়, মুহূর্তের জন্য হলেও।
আজ, ২২ বছরের ক্যারিয়ারের পর, শহিদ কাপুরকে শুধু সিনেমার সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায় না। তিনি সেই অভিনেতা, যিনি পর্দায় জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলেন—চকচকে মুখ নয়, বরং আত্মার গভীরতার খোঁজে যাত্রা করেন। এবং সেই যাত্রাতেই তিনি সত্যিকারের অমর।
মন্তব্য করুন