কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৪ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ফ্লু মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত

‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা। ছবি : কালবেলা
‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে। ফলে এ সময়টাকে ফ্লু ভাইরাসের মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এ ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নিতে হবে। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীর আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান গবেষকরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর,বি-র গবেষকরা যৌথভাবে এ সার্ভেইল্যান্স পরিচালনা করেন। সেমিনারে ২০০৭ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইউএস-সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় এই সার্ভেইল্যান্সটি বাংলাদেশে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের ১৯টি হাসপাতালে চলমান এই সার্ভেইল্যান্সের লক্ষ্য বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৌসুমি বৈচিত্র্য বোঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত করা।

আইসিডিডিআরবির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. ফাহমিদা চৌধুরী বিশ্বব্যাপী ফ্লু সংক্রমণের ধরন সম্বন্ধে ধারণা দেন। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমি বৈচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি এবং ফ্লু টিকা দেওয়ার সঠিক সময়ের ওপর ধারণা দেন তিনি। ডা. ফাহমিদা বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ তাদের ফ্লু মৌসুমের আগে ফ্লু ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১% রোগীর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে প্রায় প্রতি ১০০ জনে ১ জন হাসপাতালেই মারা যান। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি দেখা যায়।

অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে সারাবছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে। তবে প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু শনাক্তের হার বৃদ্ধি পায় এবং জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয়। এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখার প্রতি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইনফ্লুয়েঞ্জার এন্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার প্রতিরোধের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চলমান এই ফ্লু এর মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি, কাশির মত লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে এন্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যেন ওষুধের প্রতি রেজিসট্যান্স তৈরি না হতে পারে।

তিনি বলেন, এ ছাড়া হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারাবছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয় অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারব।

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে, গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩% রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মায়েদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।

সেমিনারে অংশ নেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার ড. এএসএম আলমগীর, ইউএস-সিডিসির এপিডেমিওলজিস্ট ড. গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি) এবং ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্যারেজে বসে মাদক সেবনরত প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার

কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে সংশয়ের জায়গা তৈরি করেছে : আখতার

রাকসু নির্বাচনে ৪৩ পদে লড়ছেন ৯১৮ প্রার্থী

বগুড়ায় ডিবির ওসিসহ তিন কর্মকর্তা ক্লোজড

ব্যাংক ঋণ পরিশোধে মনোযোগী সরকার

রাকসু নির্বাচনের ফল প্রস্তুতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন

‘ফ্যাসিস্ট সরকার উন্নয়নের সব বাজেট লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে’

নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা

বিষধর কিং কোবরা সাপ দেখিয়ে চাঁদাবাজি

১১১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, আছে যত শর্ত

১০

হিন্দি নিষিদ্ধ করতে চায় তামিলনাড়ু সরকার

১১

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মুক্তি পাচ্ছে ‘নীলচক্র’

১২

এবার রিপন মিয়ার বিষয়ে মুখ খুললেন বাবা

১৩

বাজেট না পাওয়ায় পরিপূর্ণ সংস্কার হচ্ছে না জবির রফিক ভবনের

১৪

সবচেয়ে বেশি দান করেন যে ধনকুবেররা

১৫

যমুনার ভাঙনে বিলীন ৩০ বাড়ি, হুমকিতে ৫ গ্রাম

১৬

চাকসু নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে 

১৭

জামায়াতের প্রতি যে আহ্বান জানালেন মির্জা ফখরুল

১৮

৭ দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় জাগপার মানববন্ধন

১৯

জাল নোট নিয়ে সতর্কবার্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের

২০
X