বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মহাশোল মাছ ফেরাতে কাজ করছে বিএফআরআই

মহাশোল মাছের টর ব্যারাকি প্রজাতি। ছবি : কালবেলা
মহাশোল মাছের টর ব্যারাকি প্রজাতি। ছবি : কালবেলা

নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) বিলুপ্ত প্রায় মহাশোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে। এ মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা এবং কৃত্রিম প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে মাছটিকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

জানা গেছে, বর্তমানে মহাশোলের ৩টি প্রজাতি নিয়ে কাজ করছে বিএফআরআই। এগুলো হলো টর টর, টর পুটিটোরা, টর ব্যারাকি। এখন পর্যন্ত টর পুটিটোরা মহাশোলের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন এবং চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবন করেছে বিএফআরআই।

বর্তমানে এ জাতের মহাশোলের পোনা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় চাষাবাদ করা হচ্ছে এ মাছটি। বাকি দুটি প্রজাতির কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবনের কাজ চলমান রয়েছে।

মহাশোল মাছ নিয়ে জানতে চাইলে বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, মহাশোল বাংলাদেশে বিদ্যমান বিপন্ন প্রজাতির কার্প জাতীয় মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। উপমহাদেশে এটি ‘স্পোর্ট ফিশ’ নামে পরিচিত। এ মাছের জন্ম ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী সুসং দুর্গাপুরের সোমেস্বরী এবং কংস নদীতে।

তিনি বলেন, কয়েকদশক আগেও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের (যেমন- ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম) খরস্রোতা নদী, ঝরনা, লেক এবং পার্শ্ববর্তী খালে বিলে প্রচুর পাওয়া যাবে।

মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে এদেশে মহাশোলসহ বহু মূল্যবান মৎস্য প্রজাতির বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মহাশোলের প্রাপ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়ে মাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাছটির জীববৈচিত্র্যতা হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসেবে কার্প জাতীয় অন্যান্য মাছের তুলনায় এর অত্যন্ত কম ডিম ধারণ ক্ষমতাকেও চিহ্নিত করা হয়।

এ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, মহাশোলের বিলুপ্তির কারণে আশির দশকে নেপাল থেকে এ মাছের পোনা আমদানি করা হয়। পরে পুকুরে পোনা ছেড়ে প্রজনন কৌশল ও জিনপুল সংরক্ষণ করা হয়। পরে ইনস্টিটিউট থেকে এ মাছের ব্যাপক পোনা উৎপাদনসহ চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। এখন উদ্যোক্তা ও চাষি পর্যায়ের সবাই এগিয়ে আসলে বিলুপ্তপ্রায় মহাশোল মাছ আবার পাওয়া যাবে।

অন্যান্য মাছের সঙ্গে মহাশোল মাছের ভিন্নতার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এই মাছটি কার্প জাতীয় মাছের চেয়ে আকারে তুলনামূলক বড় হয়। সাধারণত লম্বায় ৫২ সেন্টিমিটার এবং আকারে ৮-১০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় অন্য মাছের তুলনায় এর দাম তুলনামূলক বেশি।

এ মাছটির বৃদ্ধি অন্য মাছের তুলনায় কিছুটা কম। এর রোগবালাই কম হয় বলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ মাছটি প্রচলিত খাবারে অভ্যস্থ তাই কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে সহজেই চাষ করা যায়।

জানতে চাইলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম বলেন, মহাশোল ভোজন রসিক বাঙালির কাছে প্রিয় একটি মাছ। তবে বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে কমে যাওয়ায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এ মাছটি কিনতে পারছেন না। এ সুযোগে অসাধু জেলেরা ব্ল্যাক কার্প কিংবা গ্রাস কার্প মাছকে মহাশোল বলে বিক্রি করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে এ মাছের চাষ করে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ মাছটির গায়ের রং দেখে সহজেই আলাদা করা যায়। এ মাছটি গায়ের বং চকচকে সোনালি। অন্যান্য সমআকারের মাছের আঁইশের তুলনায় মহাশোলের আঁইশ বড়। এ মাছটির মুখে বার্বেল থাকে। যা দেখে সহজেই অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছ থেকে এ মাছটিকে আলাদা করা যায়। এ মাছটির দাম প্রজাতিভেদে ভিন্ন হতে পারে। বর্তমানে এ মাছটির দাম প্রতি কেজি ৩০০০-৫০০০ টাকা।

এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ভাবিত মহাশোলের পোনা ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই লেক, সোমেস্বরী এবং কংস নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ এবং তার আশপাশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভোলা, ফেনী, খুলনা এবং সিলেট অঞ্চলে এ মাছের চাষ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিককালে মহাশোল মাছের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক মৎস্য চাষে রুই জাতীয় মাছের সঙ্গে মহাশোল মাছের মিশ্রচাষ করা সম্ভব। ফলে পুকুরের পানির উৎপাদনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে চাহিদা পরিমাণ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. জুলফিকার আলী কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে মহাশোল মাছের ৩টি প্রজাতির মধ্যে একটি মাছের পোনা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি দুটি প্রজাতির কৃত্তিম প্রজননের কাজ চলমান রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে নিঃসন্তান দম্পতির আত্মহত্যা

‘যারা গণতন্ত্র চায় না তারা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে’

সারা দেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু কাল, কিনতে পারবেন সবাই

ইউপি সদস্যকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

মসজিদ কমিটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার গেজেট শিগগিরই : ধর্ম উপদেষ্টা

নামাজে রাকাত সংখ্যা ভুলে গেলে কী করবেন?

সাংবাদিক তুহিন হত্যা মামলার আরেক আসামি গ্রেপ্তার

সাবেক ছাত্রদল নেতার গলাকাটা লাশ উদ্ধার

পাবিপ্রবিতে ৫ ছাত্রের আমরণ অনশন

আবারও চোটে পড়েছেন রদ্রি

১০

চট্টগ্রামে এনসিপি নেতার পদত্যাগ

১১

শেখ হাসিনা যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে : এ্যানি

১২

পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দিবাস্বপ্ন কখনোই বাস্তবে পরিণত হবে না : মঈন খান

১৩

জাপার চেয়ারম্যান আনিসুল, মহাসচিব রুহুল আমীন নির্বাচিত

১৪

পরিবহন ধর্মঘটের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ

১৫

কারো মৃত্যুর পর ‘চল্লিশা’ খাওয়ানো কি জায়েজ?

১৬

আগামী নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকেই নির্বাচিত করবে : রহমাতুল্লাহ

১৭

রেলিং ভেঙে নিচে পড়লেন প্রেমিক-প্রেমিকা, মর্মান্তিক ঘটনা ভাইরাল

১৮

মাগুরায় জিয়া স্মৃতি সংসদের নতুন কমিটি গঠন

১৯

এমন কিছু কথা যা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে না বলাই ভালো

২০
X