

চুলের যত্নে তেল ব্যবহার আমাদের উপমহাদেশের এক প্রাচীন ও পরীক্ষিত অভ্যাস। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের ঘরে ঘরে নারিকেল, বাদাম, ক্যাস্টর কিংবা পেঁয়াজের তেল চুলের যত্নে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়।
তেল চুলের গোড়া মজবুত করে, স্কাল্প আর্দ্র রাখে এবং স্বাস্থ্যকর চুল গজাতে সহায়তা করে। তবে একটি প্রশ্ন প্রায় সবার মনেই আসে, চুলে তেল দেওয়া ভালো সকালবেলা, নাকি রাতে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে দুটো সময়ই উপকারী হতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে আপনার জীবনযাপন, চুলের ধরন এবং চুলের প্রয়োজনের ওপর।
কেন চুলের বৃদ্ধিতে তেল দেওয়া জরুরি?
চুলে তেল দিলে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ে, চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং শুষ্কতা ও ভাঙন কমে। তেলে থাকা প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন স্কাল্পকে পুষ্টি জোগায়, যা নতুন চুল গজানোর জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। নিয়মিত তেল ব্যবহারে চুলের ফ্রিজ কমে, চুলের টেক্সচার উন্নত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে চুল পড়া কমাতেও সহায়তা করে।
সকালে চুলে তেল দেওয়া
যারা সকালে হালকা মাথা ম্যাসাজ করে অল্প সময়ের মধ্যেই চুল ধুয়ে ফেলতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সকালবেলার তেল দেওয়া একটি ভালো অভ্যাস হতে পারে।
সকালে তেল দেওয়ার উপকারিতা
শ্যাম্পুর আগে ময়লা ও প্রোডাক্ট বিল্ডআপ ঢিলা করতে সাহায্য করে
মাথা ঠাণ্ডা রাখে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়ায়
যাদের তেল মাখা চুলে ঘুমাতে অস্বস্তি হয়, তাদের জন্য উপযোগী
সকালে তেল দেওয়ার অসুবিধা
১. তেল শোষণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না
২. তেল মাখা চুলে বাইরে গেলে ধুলোবালি ও দূষণ জমতে পারে
৩. শ্যাম্পু না করলে চুল ভারী ও চিটচিটে হয়ে যেতে পারে
রাতে চুলে তেল দেওয়া
অনেকেই মনে করেন, রাতে তেল দেওয়াই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
রাতে তেল দেওয়ার উপকারিতা
১. তেল স্কাল্পে দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ পায়, ফলে পুষ্টি ভালোভাবে শোষিত হয়
২. ঘুমের সময় শরীরের কোষ পুনর্গঠন হয়, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক
৩. হালকা ম্যাসাজ মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
৪. স্কাল্পের আর্দ্রতা বাড়ে এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়
রাতে তেল দেওয়ার অসুবিধা
বালিশ তেলতেলে হয়ে যেতে পারে, যা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর
অতিরিক্ত তেল দিলে স্কাল্পের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে
যাদের স্কাল্প খুব তেলতেলে বা ব্রণপ্রবণ, তাদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে
তাহলে কোন সময়টি সবচেয়ে ভালো?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুলের বৃদ্ধি ও গভীর পুষ্টির জন্য রাতে তেল দেওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি উপকারী। কারণ, তেল দীর্ঘ সময় স্কাল্পে থাকে এবং ঘুমের সময় শরীরের স্বাভাবিক রিকভারি প্রক্রিয়া চুলের স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে, সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিত যত্ন। যাদের জন্য সকালবেলা তেল দেওয়া সহজ এবং নিয়মিত করা সম্ভব, তারাও ভালো ফল পেতে পারেন।
সঠিকভাবে চুলে তেল দেওয়ার উপায়
১. তেল সামান্য গরম করে নিন
২. নখ নয়, আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন
৩. চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ১-২ টেবিল চামচ তেল যথেষ্ট
৪. প্রতিদিন তেল দেওয়া প্রয়োজন নেই
৫. তেল দেওয়ার পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন
শেষ কথা
সব মানুষের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। গভীর পুষ্টি ও চুলের বৃদ্ধির জন্য রাতে তেল দেওয়া ভালো, আর ব্যস্ত জীবনে সকালে তেল দেওয়া অনেকের জন্য বেশি বাস্তবসম্মত। সবচেয়ে জরুরি হলো, আপনার স্কাল্পের ধরন ও জীবনযাপনের সঙ্গে মানানসই সময় বেছে নেওয়া এবং নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়া। চুল সুস্থ রাখার পেছনে শুধু সময় নয়, নিয়মিত যত্নই আসল চাবিকাঠি।
সূত্র : দ্য হেলথ সাইট
মন্তব্য করুন